নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জের বহুল আলোচিত পলিভরাট কানাইখালী নদীর খনন কাজ সময়মত শুরু হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি বৃহত্তর পাগনার হাওরের বোরো জমির। সারা জেলার বোরো চাষাবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও বৃহত্তর পাগনার হাওরের মধ্যবর্তী বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের জমি এখন পানি নিচে রয়েছে।
প্রকৃতিগতভাবে হাওরের পানি নিষ্কাষিত না হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেশিন দিয়ে পানি সেচে ধান রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন বেশ কয়েক গ্রামের কৃষকেরা।
গত ১৬ দিন ধরে চারটি ডিজেল চালিত পাওয়ার পাম্প দিয়ে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের গঙ্গাধরপুর গ্রামের সামনের হাওরের পানি নিষ্কাশন করছেন গ্রামের শতাধিক কৃষক। এই হাওরে প্রায় শতাধিক একর জমি রয়েছে। কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে প্রতি কেয়ার (৩০ শতক) জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য ২০০ টাকা করে প্রদান করেছেন।
হাওরের পানি নিষ্কাশন করতে প্রতিদিন চারটি ইঞ্জিনের জন্য প্রায় ৯ হাজার টাকা ডিজেল কিনতে হচ্ছে তাদের। আর অন্তত ৭-৮ দিন পানি সেচ করলেও হাওরের ধান চাষের উপযোগী হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন গঙ্গাধরপুর গ্রামের কৃষকরা। এতে উপজেলা কৃষি অফিস বা অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়া যায়নি। এভাবে পানি সেচে ধান রোপন করলেও ধান গোলায় তোলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শংকা রয়েছে তাদের। কারণ ধান পাকার সময় অতিবৃষ্টি হলে হাওরে আবারো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
তবে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর পওর-১ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেছেন, “গজারিয়া খাল খননের পর চলতি বোরো মওসুমে পাগনার হাওরের পানি অন্য বছরের চেয়ে সময় নিষ্কাশিত হয়েছে। গজারিয়া খাল খনন কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। কানাইখালী খনন কাজও চলমান রয়েছে। এখনও হাওরের পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে তাই পানি প্রবাহ বন্ধ করে কাজ না করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দুইটি প্রকল্পের প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত। তবে আমরা এর আগেই দুইটি প্রকল্পের কাজ শেষ করব।”
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়- পলি মাটিতে ভরাটকৃত কানাইখালী নদীর ৪.২৫ কিলোমিটার খননে ৮৭ লাখ টাকা ও হাওরের পানি প্রবাহের জন্য গজারিয়ার ভরাটকৃত খালের ৩.৮০ কিলোমিটার খনন করতে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। ৫ ফুট বা কমবেশি গভীর করে, তলদেশে ৩৩ ফুট ও উপরে ৪০ থেকে ৫০ ফুট প্রশস্ত করে খাল ও নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গজারিয়া খালের খনন কাজ চললেও কানাইখালী নদী খননের কাজ এখনও শুরু হয়নি।
যার ফলে চলতি বোরো মওসুমে পাগনার হাওরের মধ্যবর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। এখনও অন্তত দেড় হাজার একর বোরো জমি পানির নিচে রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে জলাবদ্ধতার শিকার কৃষকেরা নিজ খরচেই পাম্প বসিয়ে পানি সেচে ধান রোপনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গঙ্গাধরপুর গ্রামের কৃষকদের ন্যায় পার্শ্ববর্তী ছয়হারা ও ভাটি দৌলতপুর গ্রামের ঢালার হাওরের পানি নিষ্কাশন করে ধান রোপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত রবিবার তিনটি পাওয়ার পাম্প বসানো হয়েছে ঢালার হাওরের পানি নিস্কাশনের জন্য। একইভাবে ১০ দিন আগে ভীমখালী ইউনিয়নের রাজাবাজ, ভান্ডা ও মল্লিকপুর গ্রামের হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৬টি পাম্প বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার কে.এম বদরুল হক জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এবার জলাবদ্ধতার পরিমান কিছুটা কমেছে। হাজার-দেড় হাজার একর জমিতে পানি রয়েছে। তবে পানি এখনও পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও কৃষকরা নিজেরা পানি নিষ্কাশন করছেন।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম আল ইমরান বলেন, “কানাইখালী ও গজারিয়া খাল ভরাটের ফলে পাগনার হাওরে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। এই দুইটি খাল খনন কাজ কিভাবে করা হচ্ছে, কতটুকু করা হচ্ছে তা আমাকে কেউ অবগত করেনি।”