স্টাফ রিপোর্টার :
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার প্রথমবারের মতো সিলেটে ফিরে ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ ও হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মতো অতীতের ধারাবাহিকতায় সিলেটের সুনাম ধরে রাখতে চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটে প্রথম
সফরে মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. মোমেন। তিনি সিলেট পৌঁছলে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ড. মোমেনকে নগরীতে নিয়ে আসেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
নগরীতে পৌঁছে প্রথমেই ড. মোমেন ওলিকূল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। পরে মাজার গেইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, আজ আমি সিলেটের সন্তান হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছি।’
তিনি প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ ও হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীকে স্মরণ করে বলেন, তাঁরা সিলেটের মানুষ হয়ে দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের যে সুনাম রয়েছে এবং তাঁরা যেভাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, আমি তাঁদের পদঙ্ক অনুসরণ করে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু অনেক দিন জিঁইয়ে রাখা হলে এ অঞ্চলে শান্তি বিঘিœত হবে। এতে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিবেশী সকল দেশের স্বার্থ বিঘিœত হবে। তাই সকলের মঙ্গলের জন্য দ্রুত এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে বিশ^নেতাদেরও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। মানবিক এ সমস্যা দূর করার জন্য তাদেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।’
মন্ত্রী প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতাকর্মীরা। পরে হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত ও পারিবারিক গোরস্থানে মা-বাবা ও আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে খুবই জঠিল ও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কাজ হয়েছে। আরো আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নেয়ারও চেষ্টা করবো।’
তিনি বলেন, ‘নতুন করে এই ইস্যু নিয়ে এখনো কোন চিন্তা করিনি। তবে এ পর্যন্ত সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আশাবাদি, মায়ানমার আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম ভারত সফর প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা কেবলমাত্র একটি সৌজন্য সফর। এই সফরে অনেক ইস্যু আমরা তুলে আনতে চাই না। তবে অনেক আলোচনা হবে। বিভিন্ন বিভাগের ৯জন সচিব যাবেন। সব মিলিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হবে।’
এদিকে, বিকেলে সিলেট চেম্বার এর উদ্যোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, ‘২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে, ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দেবো।’ ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার উপর আস্থা রেখে যে দায়িত্ব প্রদান করেছেন সেটা যথাযথভাবে পালন, দেশ ও জনগণের প্রত্যাশা পুরণ আমি নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। এক্ষেত্রে তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা শাখার সভাপতি ও সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহ মশাহিদ আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর, বিজিত চৌধুরী, অধ্যাপক জাকির হোসেন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জগদীশ দাশ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট শামসুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট রণজিৎ সরকার, এডভোকেট মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, মো. আলী দুলাল, জগলু চৌধুরী, এডভোকেট আজমল আলী, হাজি রইছ আলী, সিটি কাউন্সিলার সালেহ আহমদ সেলিম, আযম খান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক খাদিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট আফসর আহমদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি, জেলা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ শাহনূর প্রমুখ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চেম্বার সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় চেম্বারের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
পরে তিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলায় আহত দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন।
সন্ধ্যায় হাফিজ কমপ্লেক্সে সিলেট জেলা, মহানগর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের শুরুতে ড. মোমেন সিলেটের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটসহ সারাদেশে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। দলের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা ও বিপুল উৎসাহ নিয়ে কাজ করার ফলেই এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর ফলশ্র“তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রিসভায় সিলেট বিভাগে ৫ জন মন্ত্রী উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণের দাবি বাস্তবায়নে দলগতভাবে সোচ্চার হয়ে আমরা কাজ করতে চাই। এজন্য ড. মোমেন সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।