ছনি চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে :
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় বহুল আলোচিত কলেজ ছাত্রী তন্নী রায় ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা একমাত্র আসামী রানু রায়ের মৃত্যুদন্ডাদেশ এর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৭) জানুয়ারী দুপুরে কারাদন্ড প্রদান করেন বিশেষ বিচার ট্রাইব্যুনাল (২) সিলেট এর বিচারক মোঃ রেজাউল করিম এ আদেশ দেন।
রায়ের বিবরণীতে জানা যায়, আনিত অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় আসামী রানু রায়কে ৩০২ ধারা মোতাবেক মৃত্যুদন্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ২০১ ধারা মোতাবেক ৩ বছরের জেল ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদাণ করেন বিচারক। রানু রায় নবীগঞ্জ পৌর এলাকার (বর্তমান ঠিকানা) কানু রায়ের পুত্র। রায়ের ঘোষণা কালে আসামী ও বাদী পক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সিলেটের স্পেশাল আইনজীবী কিশোর কুমার কর, এডভোকেট লালা মিয়া, আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট মিনহাজ গাজী, এডভোকেট প্রভুত রায়। গত ১-২ জানুয়ারী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক ৭ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন। এর আগে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন করেন আদালত। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের পিতা ও মামলার বাদী বিমল রায় বলেন, বিজ্ঞ আদালতের রায়ে আমি এবং আমার পরিবার সন্তুষ্টি, যে রায় মহামান্য আদালত দিয়েছেন সেই রায় অনুযায়ী যেন দ্রুত ঘাতক রানু রায়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি, এ শাস্তি কার্যকর দেখে আর কোনো ঘাতক যেন বাবা-মা কোল খালি করার সাহস না পায়।
উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ১৭-সেপ্টেম্বর বেলা দেড় টার দিকে তন্নী রায় নবীগঞ্জ শহরতলীর বাংলা টাউনে ইউ.কে আই,সিটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেড় হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। তন্নীকে খুঁজে না পেয়ে এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন তন্নী রায় এর বাবা। সাধারণ ডায়েরী করার ৩ দিনের মাথায় শাখা বরাক নদীর নবীগঞ্জ শহরতলীর আক্রমপুর এলাকার গরমুড়িয়া ব্রীজের নিকট থেকে কলেজ ছাত্রী তন্নী রায়ের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। তন্নীর লাশ উদ্ধার এবং মামলা দায়েরের পর থেকেই পুলিশ ঘটনাস্থল এবং তন্নী তথাকথিত প্রেমিক রানু রায়ের বাড়িসহ আশপাশের সম্ভাব্য ঘরবাড়িতে তল্লাশী চালায়। নবীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে মামলার অগ্রগতি না আসলে মামলাটি হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের কাছে প্রেরণ করা হয়। এদিকে তন্নী হত্যা মামলার প্রধান আসামী রানু রায়কে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে একের পর এক মানববন্ধন করে আসছিল বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন। এরই জের ধরে তন্নী রায় হত্যাকান্ডের ২০ দিনের মাথায় (৭ অক্টোবর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ আজমিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ বিকাল বেলা বি-বাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পরে (৮ অক্টোবর) শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার আদালতে ঘাতক রানু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে এবং তন্নী ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। রানু রায় স্বীকারোক্তিতে বলে তন্নীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে রানু রায়ের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল, ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার, প্রেমিক রানু রায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তন্নী ইউ.কে আই সিটি কোচিং সেন্টারে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে, রানু রায়ের বাড়িতে যায়, যাওয়ার পর তন্নীর সাথে একাধিক ছেলের সম্পর্ক আছে এই বিষয়ে রানু তন্নীকে ওই সব ছেলেদের সাথে কথা বলা বন্ধ করার জন্য বলে, তখন এক পর্যায়ে, রানুর সাথে তন্নীর ঝগড়া সৃষ্টি হয় এ সময় রানু রায় তন্নীকে হাত দিয়ে আঘাত করে,এরপর তন্নীর গলায় রানু চেপে ধরলে এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তন্নী মারা যায়। গত ১৯.১২.২০১৬ তন্নী হত্যা মামলায় রানু রায়কে একক আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেছে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ।
গত ৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল এক প্রজ্ঞাপনের তন্নী হত্যা মামলা দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির স্বার্থে বাদী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল সিলেট এ হস্থান্তর করা হয়।