খন্দকার মুক্তাদিরের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে পুলিশ-বিজিপি’র অভিযান ॥ সমাবেশ পন্ড, ৩০ নেতাকর্মী আটক

184
কোর্ট পয়েন্টে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সর্বশেষ নির্বাচনী সমাবেশে পুলিশী বাধায় পন্ড হয়ে যায়।
পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-১ আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সর্বশেষ নির্বাচনী সমাবেশ পুলিশী বাধার মুখে পন্ড হয়ে গেছে। আম্বরখানা ইলেক্ট্রক সাপ্লাই রোডে নূরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে খন্দকার মুক্তাদিরের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৬ নেতাকর্মী ও কোর্ট পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ২৪ জন নেতাকর্মী ও সাধারণ পথচারীসহ মোট ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও বিজিবি।
এ ঘটনায় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির তার প্রধান কার্যালয়ের বাইরে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী জনগণের কাছে এর বিচার দাবী করেন। পরে তিনি কোর্ট পয়েন্ট থেকে বৃহষ্পতিবার পুলিশী বাধার মুখে সর্বশেষ নির্বাচনী সমাবেশ না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এরপর খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় তার তোপখানাস্থ বাসায় এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবী করেন- আগামী ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজয় জেনে নেতাকর্মীদের আইন শৃংখলাবাহিনী দিয়ে ধরপাগড় করে আতংক সৃষ্টি করছে। যাতে ধানের শীষের পক্ষে কেউ প্রচারণা করতে না পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং এর আগে গায়েবী মামলায় প্রায় ৩শ’জনকে আসামী করা হয় বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মহিলা দল নেত্রী সামিয়া চৌধুরী, ফাতেমা জামান রোজী, জাহানারা ইয়াসমিন ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম এ মালেক খান প্রমুখ।

প্রচারণার শেষ দিনে নগরীর জিন্দাবাজারে গণসংযোগ করছেন সিলেট-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারের মুক্তাদিরের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। পৌণে ৬টার দিকে পুলিশ ও বিজিবি মুক্তাদিরের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে খাদিমনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম আজাদ, ছাত্রদলকর্মী রনি, রাজুসহ ৬ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্বাচনী কার্যালয়ে পৌছান খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি এ ঘটনায় প্রধান কার্যালয়ের বাইরে বের হয়ে নির্বাচনী কার্যালয়ের বাইরে দাড়িয়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দেখেন, আপনারা বিচার করেন। অন্যায়ভাবে আমার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আপনারা আগামী ৩০ তারিখ ভোটের মাধ্যমে এই বিচার করবেন।
এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ও বিজিবির কয়েকটি গাড়ি নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর তারা নির্বাচনী কার্যালয়ের দুটি গেইটের একটি বন্ধ করে দেয়।
আটকের ব্যাপারে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে মামলার এক আসামীকে গ্রেফতার করেছি।
এদিকে, খন্দকার মুক্তাদির প্রচারণা শেষ দিনে বন্দরবাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে কোর্ট পয়েন্টে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ধানের শীষের প্রার্থী মুক্তাদির আহমদের সমর্থনে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনী সমাবেশ শুরুর পূর্বে খন্দকার মুক্তাদিরের নেতৃত্বে কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার অভিমুখে একটি শোডাউন বের করেন বিএনপি সমর্থকরা। এ সময় শোডাউনটি জিন্দাবাজারস্থ অগ্রগামী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসা মাত্র পুলিশ কয়েকজনকে ধরার চেষ্টা করলে শোডাউনটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা আর সমাবেশ না করে স্থান ত্যাগ করেন। এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এছাড়া কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ না করে স্থান ত্যাগ করার পূর্বে সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদির সড়কে দাঁড়িয়ে পথচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দেখেছেন তারা (আওয়ামী লীগ) আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে কি ভাবে হয়রানি করাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আটকের মাধ্যমে আমাদের নানা ভাবে বাধা দিচ্ছে।
সমাবেশে কোন রকম বাধা প্রদান করা হয়নি জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল মিয়া জানান, তাদের সমাবেশে কোন বাধা দেয়া হয়নি। আমরা মামলার আসামী গ্রেফতার করেছি। তারা নিয়মিতই তাদের সভা নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারছে। কয়জন আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ১৪ থেকে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সঠিক সংখ্যা এখনো তিনি জানেন না বলে জানান।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার জরুরী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে একইভাবে বক্তব্য তুলে ধরেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ পরাজয় জেনে নেতাকর্মীদের আইন শৃংখলাবাহিনী দিয়ে ধরপাকড় করে আতংক সৃষ্টি করছে। যাতে ধানের শীষের পক্ষে কেউ প্রচারণা করতে না পারে। আওয়ামী লীগের এই জুলুম আল্লাহ সহ্য করবেনা। এই অন্যায় জুলুমের বিচার সিলেটবাসীর কাছে দিলাম। ৩০ তারিখ ধানের শীষ প্রতীকে সিলেটবাসী তাদের গণরায় ব্যক্ত করে এই অন্যায় অবিচারের জবাব দেবেন, ইনশাআল্লাহ।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির আরো বলেন, কোন ধরনের উস্কানী ছাড়াই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আমার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডস্থ নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে তল্লাশীর নামে পুলিশ-বিজিবি তান্ডব চালিয়েছে। কার্যালয়ে কর্মরত নিরপরাধ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাদ মাগরিব কোর্ট পয়েন্টে আমার পূর্ব নির্ধারিত শেষ নির্বাচনী সভা পন্ড করে দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আমার সাথে পুলিশ খুব বাজে আচরণ করেছে। আমার নিশ্চিত বিজয় নস্যাত করতেই প্রশাসনকে আমার বিরুদ্ধে নগ্নভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাকশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ধানের শীষের সমর্থনে সিলেটে জনতার যে ¯্রােত নেমেছে তা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনতার এই বাঁধভাঙ্গা ¯্রােতকে রুখে দেয়ার সাধ্য কোন অপশক্তির নেই। ভয়কে জয় করে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে শুধু ভোট প্রদান করে নয়, ভোটকে রক্ষাও করতে হবে। ইতিহাস সাক্ষী সিলেটের পুণ্যভূমিতে ভোট লুটপাটকারীদের শেষ রক্ষা হয় নাই। ৩০ ডিসেম্বর আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরবো।
সবর্দলীয় ছাত্র-ঐক্যের উদ্যোগে মতবিনিময় : ধানের শীষের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে গণসংযোগ অনুষ্টিত হয়। গণসংযোগ শেষে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে কোর্ট পয়েন্টে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যজোটের নেতা ও সিলেট জেলা ছাত্রদল সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী ফরিদ আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হোসাইন, সিলেট জেলা পশ্চিম শিবিরের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ রাসেল ও জেলা পূর্ব শিবিরের সেক্রেটারী রুকন উদ্দিন।