আজ জিতলেই টি২০ সিরিজও বাংলাদেশের

91

স্পোর্টস ডেস্ক :
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেই সুখ না পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছে মাশরাফিবাহিনী। এবার টি২০ সিরিজও জয়ের পালা। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় ও শেষ টি২০তে হারাতে পারলেই টি২০ সিরিজও বাংলাদেশের হয়ে যাবে। ম্যাচটি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় শুরু হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজে হারানোর মিশনে গত সোমবার নেমেছিল বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম টি২০ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রথম টি২০তেই হেরে যায় বাংলাদেশ। ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায়। তাতে সিরিজ হারের বিপদেই পড়ে যায়। তা থেকে দ্বিতীয় টি২০তে নিজেদের রক্ষা করে। ৩৬ রানে জিতে যায়। সিরিজে আসে ১-১ সমতা। এখন সিরিজ জয়ের হাতছানিও দিচ্ছে। আজ ক্যারিবীয়দের হারাতে পারলেই হয়। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে আজ ম্যাচটিতে নামার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আছে। মানসিকভাবেও আছে চাঙ্গা। প্রথম টি২০তে যেভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ, ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন, দ্বিতীয় টি২০তেই তা থেকে মুক্তি মিলে। দাপট দেখান ব্যাটসম্যানরা। তাতে আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টি২০তে হারের পর টানা দুই টি২০ জিতে সিরিজ জেতার প্রেরণাও আছে। সেইরকম কিছুর অপেক্ষাতেই এখন আছে সবাই।
প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংসে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও সহজেই ৫ উইকেটে জিতেছে। মনে করা হয়েছিল, ২০০৯ সালের পর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। সাই হোপের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেটি তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়। অঘোষিত ‘ফাইনালে’ রূপ নেয় ম্যাচটি। যে দল জিতবে ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা যে তাদেরই হয়ে যাবে। খেলাটি আবার হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেক ম্যাচটিতে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে হেরেছে। তাই শঙ্কাও ছিল। সিলেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে অভিষেকে না আবার একই দশা হয়। যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে বিপদমুক্ত থাকার উপায় ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতে পাত্তাই পায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে হেরেছে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে। এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পাঁচ মাস না যেতেই আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারাল বাংলাদেশ।
এবার টি২০ সিরিজও জিতে নেয়ার পালা। তা জিততে পারলে প্রথমবারের মতো কোন দলকে পূর্ণাঙ্গ তিন ফরমেটের সবকটি সিরিজে হারানোর ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।
টি২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক শক্তিশালী দল। দলটি টি২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। টি২০ ক্রিকেট র‌্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের (১০তম) ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সপ্তম)। দলটির ক্রিকেটাররাও বিশ্বজুড়ে যে টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলো হয় তা দাপিয়ে বেড়ান। সেখানে বাংলাদেশের টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আছেন টি২০ ফেরিওয়ালা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমও টি২০ লীগগুলো খেলেন। তবে সেটি নিয়মিত নয়। এক সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের আর কেউ নিয়মিত টি২০ লীগগুলো খেলেন না। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা পারদর্শী। টি২০ তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের নখদর্পণে। প্রথম টি২০তে সাই হোপ ঝড়ে তা দেখাও গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ঝড় এবং বোলারদের নৈপুণ্য দেখার মিলেছে।
তাছাড়া এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে বাংলাদেশই টি২০ সিরিজে জিতে। প্রথম টি২০ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে হয়। তাতে বৃষ্টি আইনে হারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ হয় মার্কিন মুলুকে। সেখানে টানা দুই টি২০ জিতে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ জয়ই বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে ৫টি দ্বিপক্ষীয় টি২০ সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। দুটিতে জিতে। দুটিতে হারে। একটি হয় ড্র। এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ হয়। দুই দলের মধ্যকার প্রথমবার একাধিক ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়। তাতে জিতে বাংলাদেশ। এর বাইরে যখন সফরে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অথবা সফরে যায় বাংলাদেশ, একটি করে টি২০ ম্যাচের সিরিজ হয়।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার এক ম্যাচের সিরিজে হারে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে এক ম্যাচের সিরিজে পাল্টা জবাব দেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে দেশের মাটিতে হারে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের একমাত্র টি২০ ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। দেশের মাটিতে দুইবার হওয়া সিরিজে একবার হারে একবার জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় তিন সিরিজের একটিতে জিতে। একটিতে হারে। একটিতে হয় ড্র। তার মানে এবার যে দল সিরিজ জিতবে তারাই সিরিজ জয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে।