স্পোর্টস ডেস্ক :
একটি অসাধারণ শটেই একজন ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেতে পারে। প্রথম টি২০তে যেমন সাই হোপ ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে উঠেছিলেন। এরপর তো বাংলাদেশকে একাই ডুবিয়ে দিলেন। আজ বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচে হোপ নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেই আত্মবিশ্বাস দেখতে চায় সবাই। তাহলেই যে আজ জেতা যাবে। জিতলে সিরিজে ১-১ সমতা আসা সম্ভব। এর বিপরীত হলে আবারও হার হলে আজই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে যাবে। তখন শনিবার টি-২০ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ হয়ে উঠবে। আর আজ জিতলে শনিবারের ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়ে যাবে।
তামিম ও লিটনের ‘ডাউন দ্য উইকেটে’ এসে শট মারা, সৌম্যের ‘পেরিস্কুপ’ শট, মুশফিকের ‘স্কুপ’ শট, আরিফুলের ‘হেলিকপ্টার’ শটেই আজ সবার দৃষ্টি আছে। এই শটগুলো খেলতে গিয়ে ব্যর্থ না হয়ে যদি এবার সাফল্য মিলে, তাহলেই তো আত্মবিশ্বাস মিলে যাবে। আর সেই আত্মবিশ্বাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এবার চূর্ণবিচূর্ণ করা যাবে। প্রথম টি২০ থেকে এটা ভাল করেই বোঝা গেছে, ব্যাটসম্যানদের আসল কাজটি করে দিতে হবে।
যদি এবার দল আগে ব্যাটিং করে তাহলে ব্যাটসম্যানদের বড় স্কোরই গড়ে দিতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে টি২০তে কতটা শক্তিশালী দল বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে, তাতো প্রথম টি২০তেই বোঝা গেছে। ১০.৫ ওভারেই জিতে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই জয়ও এসেছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে যদি বড় স্কোর দাঁড় করানো এবারও না যায় তাহলে ম্যাচ বাঁচানো কঠিন। আর যদি আগে বোলিং করতে হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখে স্কোরটাকে সহনশীল অবস্থায় রাখতে হবে। তা না হলেও আছে বিপদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা যে কতটা ভয়ঙ্কর তাও যে দেখার মিলেছে। তাই বোঝাই যাচ্ছে যা করার আসলে ব্যাটসম্যানদেরই করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের ওপরই জয় নির্ভর করছে।
প্রথম টি২০তে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই শুধু হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল হক দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীমের মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হন। শুধু ব্যর্থই হননি, অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস এবং মারমুখি হয়ে খেলতে যাওয়ার প্রবণতায় ডুবেছেন। দলকেও ডুবিয়েছেন। এবার খেলাটি হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। নিজেদের ‘হোম অব ক্রিকেট’। চেনা মাঠ। সবকিছুই জানা। এই জানা বিষয়গুলোই এখন কাজে লাগানো গেলেই হয়।
মিরপুর স্টেডিয়ামে এ পর্যন্ত ২০টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ১৩টিতেই হেরেছে। ৭টিতে জিতেছে। সর্বশেষ এই স্টেডিয়ামে ফেব্রুয়ারিতে টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচটিতে ১৯৩ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ। বোঝাই যাচ্ছে, স্কোর অনেক বড় হলেও কোন দলই নিরাপদ নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ স্টেডিয়ামে তিনটি টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ। একটিতে জিতেছে। দুটিতেই হেরেছে। এ স্টেডিয়ামে প্রথম টি২০ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই খেলেছিল বাংলাদেশ। তাতে জিতেছিলও। এরপর মাঝখানে ২০১২ সালে ও ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটিতে বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৩২ রানের বেশি করতে দেয়নি বাংলাদেশ। জিতেছিলও আবার ১ বল বাকি থাকতে। এখন এ স্টেডিয়াম এতটাই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হয়ে উঠেছে, কখন কি আচরণ করে সেটি বোঝাই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে খেলা যেহেতু বিকেলে শুরুতে যে দল ব্যাটিং করবে, তাদেরই সুবিধা হওয়ার কথা। ‘শিশির’ যে এবার প্রভাব ফেলবে।
এ স্টেডিয়ামে ২০৪ রান হওয়ার রেকর্ড আছে। ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড করে এই রান। আবার ৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্নও আছে। বিশ্বকাপেই আফগানিস্তানকে এমন কঠিন মুহূর্তের দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতি সময়ে এই স্টেডিয়ামে ১৫০ রান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ১১টি টি-২০ হয় এ স্টেডিয়ামে। ২২টি ইনিংস। এর মধ্যে মাত্র তিনটি ম্যাচে ১৫০ ছড়ানো ইনিংস দেখার মিলে। তবে ২০১৬ সালের এশিয়া কাপের পর প্রায় দুই বছর মিরপুর স্টেডিয়ামে কোন টি২০ হয়নি। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে আবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা খেলে। তাতে বাংলাদেশ ১৯৩ রান করেও জিততে পারেনি। তাতে বোঝাই যাচ্ছে, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট যে দল ভাল করতে পারবে তারাই জিতবে। আজ দ্বিতীয় টি২০তে বাংলাদেশই জিতুক সেই আশাই এখন সবার।