সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
পরীক্ষা দেয়া হলনা গোলাপগঞ্জ ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবি ছাত্র মালেকের। নিবে গেলো মা-বাবার স্বপ্ন। ছোট আদরের ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা মায়ান বেগম। ছেলের ঘরে থাকা ফটো নিয়ে তিনি বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। মায়ের আহাজারিতে যেন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। স্বজনদের অনেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলছে প্রতিবেশীরাও। গতকাল শনিবার (১৫ডিসেম্বর) দুপুরে নিহতের বাড়ীতে গিয়ে এমন নির্মম দৃশ্য দেখা যায়। নিহত মালেক ৫ ভাই বোনদের মধ্যে সকলের ছোট ও আদরের ছিল। সকলের স্বপ্ন ছিল সে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বড় একটি চাকরী করবে। সকলের সেই স্বপ্ন সড়ক দুর্ঘটনায় বিষাদের ছায়ায় পরিণত হয়েছে। স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায়,মালেকের বড় ভাই আব্দুল মানিক (২৭) তিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক। নিহতের মেজো ভাই আব্দুল খালিক (২৪) সিলেট মদন মোহন কলেজের অনার্স ৩ বর্ষের শিক্ষার্থী। ৫ ভাই বোনদের মধ্যে (বড়) দুই বোন আয়শা বেগম (৩৩) ও রেজন আক্তার (২৮) বিয়ের পর থেকে স্বামীর সংসার করছেন। স্বজনরা এ ঘটনার পর তার দুই বোনকে মালেক অসুস্থ বলে বাড়ীতে আসতে বলেন। বাড়ীতে এসে তারা জানতে পারে তাদের আদরের সেই ছোট ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় যখন নিহতের লাশ জানাজার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের করা হয় তখন মা ও দুই’বোনের আর্ত চিৎকার শুনেও আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠে।
নিহতের পিতা ফয়েজ আহমদ পেশায় একজন ট্রাক চালক। তিনি সিলেট টু খুলনা সড়কে ডিস্ট্রিক ট্রাক চালান। তাকেও সেখান থেকে ছেলের অসুস্থতার খবর দিয়ে বাড়ীতে আনা হয়। তার বাবাও ভেঙ্গে পড়েছেন। নিহতে মামা আলম আহমদ প্রতিবেদককে জানান,মালেক প্রতিদিনের ন্যায় বিকালে গোলাপগঞ্জ বাজারে পরিবারের বাজার করতে যায়। বাজার শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গোলাপগঞ্জ পৌর চৌমুহনী থেকে (লকাল) সিএনজি যোগে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের পৌরসভার রাঙ্গাডর বাজারের পাশে যাত্রীবাহি ওই সিএনজিটি একটি নোহা গাড়ীকে অবারটেক করতে চাইলে বিপরিত দিক থেকে আসা গোলাপগঞ্জগামী বাস ওই সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় যাত্রিবাহী সিএনজিটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা চালকসহ ৪জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। রাত অনুমান ১০টায় মালেক মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়ে। পরে কর্তব্যরত ডাক্তার অপর আহত ৩জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাত ১২টায় এডির ছাড়পত্র নিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই পুলিশ মালেকের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
গতকাল শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) বাদ আছর গোলাপগঞ্জ পৌরসভার রণকেলী লামাদক্ষিণ ভাগ ঈদগাহ মাঠে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত আব্দুল মালেক উপজেলার ঢাকাদক্ষণ ইউপির ধারবহর গ্রামের ফয়েজ আহমদের ছেলে এবং উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। জানাযায় আসা তার সহপাঠিরা তার লাশ দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা যায়। আরাফ নামে তার এক সহপাঠির সাথে আলাপ করা হলে সে বলে, মালেক দুপুরে আমার সাথে মোবাইলে কথা বলেছে। আমি বিশ^াস করতে পারছি না সে মারা গেছে। তার জানাযায় ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শতশত লোক অংশগ্রহণ করেন। পরে স্থানীয় কর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে ওসমানীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে স্বাদ কোম্পানিতে মালামাল দেয়। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোন মামলা হয়নি। স্বজনরা এডির ছাড়পত্র নিয়ে আসায় এবং নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই মালেকের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই বাস ও সিএনজি থানার পুলিশ হেফাজতে।