আশা ভঙ্গ বাংলাদেশের

184

স্পোর্টস ডেস্ক :
একের পর এক ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং মিসের মহড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিততে পারল না বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে হেরে যায়। সাই হোপের ক্যারিয়ারসেরা ১৪৬ রানের ইনিংসে আশা ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। তাতে সিরিজেও ১-১ সমতা আসে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসার যে আশা, তা ভঙ্গ করে দেন হোপ।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও টস হারে বাংলাদেশ। তবে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আগে ব্যাটিং করেনি। বাংলাদেশকেই ব্যাটিংয়ে পাঠায়। বাংলাদেশও ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৫৫ রান করে। শুরুতে তামিম ইকবালের ৫০ রানের সঙ্গে মাঝে মুশফিকুর রহীমের ৬২ ও শেষে সাকিব আল হাসানের ৬৫ রানেই এ স্কোর করা যায়। এশিয়া কাপের পর ওয়ানডে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জ্বলে উঠতে পারেননি তামিম ও সাকিব। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ব্যাটিং ঝলক দেখালেন। টমাসতো (৩/৫৪) গতির ঝড় তুলেন। জবাব দিতে নেমে হোপের ১৪৪ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় করা অসাধারণ ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯.৪ ওভারে ২৫৬ রান করে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এবারও স্পিন দিয়েই শুরুটা হয়। কাইরন পাওয়েলের পরিবর্তে খেলতে নামা ওপেনার চন্দ্রপল হেমরাজকে শুরুতেই আউট করে দেন মিরাজ। এরপর সাই হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো মিলে ভোগাচ্ছিলেন। দুইজন মিলে ভালই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সাকিব, মিরাজ, মুস্তাফিজ, মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ কেউই এ দুইজনকে আটকাতে পারছিলেন না। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে যখন ৭০ রান জমা হয়, হোপ ও ব্রাভো মিলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন; তখন রুবেল হোসেন বল হাতে নিয়ে ব্রাভোকে (২৭) বোল্ড করে ব্রেকথ্রু এনে দেন। মনে করা হচ্ছিল, এবার উইকেট পড়া শুরু হবে। কিন্তু হোপ আর মারলন স্যামুয়েলস মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। হোপও হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ১৩২ রানে চলে যায়, তখনই অবশ্য স্বস্তি মিলে। ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভূত হন মুস্তাফিজুর রহমান। তার কাটার বলে ছোঁয়া লাগাতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন স্যামুয়েলস (২৬)।
শিমরন হেটমায়ার নেমেই আউট হয়ে যেতেন। তখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে এসে পড়তো ম্যাচ। কিন্তু রুবেলের বলে শর্ট ফাইন লেগে হেটমায়ারের ক্যাচটি ধরতে পারেননি হেটমায়ার। রানের খাতা খোলার আগেই ‘নতুন জীবন’ পেয়ে তিনি বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। তবে তা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি। রুবেলের বলেই স্কয়ার লেগে আউট হয়ে যান হেটমায়ার (১৪)। ২ রান যোগ হতেই অধিনায়ক পাওয়েলকে (১) সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় ৫ উইকেট। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। এরপরও হোপ হুঙ্কার হয়ে উইকেটে থাকেন। ১৭০ রানের সময় রোস্টন চেসকে রান আউট করার সুযোগটি যদি কাজে লাগানো যেত, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পুরো চাপে ফেলা যেত। কিন্তু মুশফিক একটু দেরিতে উইকেটের কাছে আসায় তা সম্ভব হয়নি। আর তা না হওয়াতেই ভুগেছে বাংলাদেশ। হোপের সঙ্গে চেস যে ২৮ রানের ছোট্ট জুটি গড়লেন, তা সেই রান আউট মিসেই সম্ভব হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের বলে মিডঅনে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন চেস (৯)। ১৮৫ রানের সময় চেসের আউটে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু হোপ যেন আশা ভঙ্গের বার্তা দিতে থাকেন।
দেখতে দেখতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিও করে ফেলেন হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজও ২০০ রানের ওপরে চলে যায়। ২০৮ রানের সময় আবারও একটি ক্যাচ হাতছাড়া হয়। এবার ৬ রানে থাকা কিমো পলের ক্যাচ ধরতে পারেননি নাজমুল ইসলাম অপু। তাতে করে ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতির তৈরি হতে থাকে। হোপ ও পল মিলে যে রান অতিক্রম করার কাছাকাছি এগিয়ে যেতে থাকেন। তখন চিন্তাও বাড়তে থাকে। কোথায় ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে ছিল, জয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে গিয়েছিল, সেখানে যেন আশাহত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। উত্তেজনাও বাড়ে। ৩০ বলে যখন ৩৮ রান লাগে, তখন সাকিব ৩ রান দেন। ২৪ বলে যখন ৩৫ রান লাগে। তখন মুস্তাফিজও ৩ রান দেন। ১৮ বলে জিততে যখন ৩২ রান লাগে তখন রুবেল ১০ রান দেন। নাজমুল ইসলাম এর মধ্যে হোপের ক্যাচটিও মিস করেন। ১২ বলে তখন জিততে ২২ রান লাগে। শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকেন বাংলাদেশ বোলাররা। কিন্তু যেই মুস্তাফিজ ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন গুরুত্বপূর্ণ ওভার হয়ে ওঠে, এমন ওভারেই সব শেষ হয়ে যায়। মুস্তাফিজ ওভারটিতে ১৬ রান দিয়ে দেন। এখানেই ম্যাচ হার যেন হয়ে যায় বাংলাদেশের। তাতে শেষ ওভারে জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ বলে ৬ রান লাগে। মাহমুদুল্লাহর বোলিংয়ে আনা হয়। ২ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হোপ অপরাজিত ১৪৬ ও পল অপরাজিত ১৮ রান করেন। দুইজন মিলে ৭১ রানের জুটি গড়েই বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং শুরুর আগে অবশ্য বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দলের ১৪ রানের সময়ই ইমরুল কায়েস রানের খাতা খোলার আগেই টমাসের গতি আর বুদ্ধির সামনে নত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ওশান টমাসের গতিময় অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়েই আউট হয়ে যান ইমরুল। তার আগেই ৮ রানের সময় টমাসেরই ইয়র্কার বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে ডান পায়ের পেছনে গোড়ালির একটু ওপরে ব্যথা পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ৫ রান করা লিটন কুমার দাস। স্ট্রেচারে করে লিটনকে মাঠের বাইরে নিতে হয়। যদিও হাসপাতালে তাৎক্ষণিক স্ক্যান করার পর কোন চিড় ধরা পড়েনি। ব্যথা কমলে আবার ব্যাট করতে নামতে পারবেন, তাও তাৎক্ষণিক টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জানানো হয়। লিটন শেষে ব্যাট হাতে নামেনও। কিন্তু ৮ রানের বেশি করতে পারেননি।
শুরুর ধাক্কায় অবশ্য এতটা বেগ পেতে হয়নি। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম যে উইকেটে দ্রুতই থিতু হয়ে যান। দুইজন মিলে দলকে ১৯তম ওভারেই ১০০ রানে নিয়ে যান। দেখতে দেখতে দুইজনের শতরানের জুটিও হয়ে যায়। এরমধ্যে মুশফিক (৬২ বলে ৫০) ও তামিম (৬১ বলে ৫০) হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলের রান যখন ১২৫, দুইজনের জুটি যখন ১১১ রানে যায়; তখনই তামিম (৬৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ রান) আউট হয়ে যান। দেবেন্দ্র বিশুর ঘূর্ণির ফাঁদে পড়েন তামিম। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে কেমার রোচের হাতে ধরা পড়েন তামিম। তার আউটের পর মুশফিকও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। স্কোরবোর্ডে আর ৭ রান যোগ হতেই মুশফিকও আউট হয়ে যান।
পেসার টমাস কি দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকেন। বাউন্স আর গতিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কাঁপাতে থাকেন। সেই কাঁপুনি ইমরুলের পর মুশফিকের গায়েও লাগে। কি অসাধারণ ব্যাটিং করছিলেন মুশফিক। ৫০ পেরিয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাবেন মুশফিক। এমনই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ৮০ বলে ৫ চারে ৬২ রান করতেই টমাসের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল থার্ডম্যানে পাঠানোর তাড়নায় উইকেটরক্ষক সাই হোপের হাতে ধরা পড়েন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন মুশফিক। বাংলাদেশও চাপে পড়ে যায়।
সেই চাপ সামাল দিতে থাকেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। ৩১ ওভারের মধ্যে দলকে ১৫০ রানে নিয়ে যান দুইজন।