রাজনীতি কলুষমুক্ত হোক

216

বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে গত কয়েক বছরে। আগে আদর্শিক অবস্থান থেকে অনেকে রাজনীতিতে আসত। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রেও অনেকের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছে। আগেকার দিনে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমাজে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হতো। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানাদি থেকে শুরু করে নানা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজনীতিবিদরা। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও তৃণমূল পর্যায় থেকে একজন রাজনীতিবিদকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিজেকে গড়ে তুলতে হতো। দলের বিভিন্ন সংগঠন, যেমন—ছাত্রসংগঠন, যুবসংগঠনে সময় দিয়ে মূল দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত। আগেকার দিনে আইনপ্রণেতা হিসেবে আসতেন মূলত আইনজ্ঞরা, স্থানীয় পর্যায়েও তাঁদের সুনাম ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ আর সেই দিন নেই। কারো কারো রাজনীতি এখন অনেকটাই ওপরে ওঠার সিঁড়ি। রাজনৈতিক দলগুলোও ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। মানতে হবে, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। স্বাধীন ব্যবসা করার পর একজন ব্যবসায়ী যেমন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার চিন্তা করতে পারেন, তেমনি সমাজের যেকোনো অংশ থেকে যে কারো রাজনীতিতে আসার সুযোগ রয়েছে। আবার ক্যাডারভিত্তিক দল বাদে অন্য কোনো দলে সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ নেই। ফলে রাজনীতিবিদদের একটি পেশাও থাকতে হয়। রাজনীতি যখন কারো পেশা হতে পারে না তখন রাজনীতিকে কেউ কেউ পেশাসহায়ক ভাবতে শুরু করলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এটাই এখন চলতি হাওয়া।
আগে সহযোগী ছাত্র ও যুবসংগঠন থেকে অনেককেই মূল রাজনৈতিক দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে দেখা যেত। আজকের জাতীয় রাজনীতির অনেক নেতাই তাঁদের ছাত্রজীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উজ্জ্বল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে তাঁদের। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক মাইলফলক তাঁদের হাতেই রচিত হয়েছে। আবার পুরনো নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্বের বিকাশও অতীতে দেখা গেছে। কিন্তু আজকের দলনির্ভর রাজনীতিতে মূল দলে অনেক ছাত্রনেতারই ঠাঁই মেলে না।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি, ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। হুট করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হলেও তাদের স্বাগত জানাতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল দ্বিধা করেনি। এমনকি জীবনে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের সদস্যভুক্ত হয়েই জাতীয় নির্বাচনে অনেককে অংশ নিতেও দেখা গেছে। দলের কিংবা নিজের ইমেজ কাজে লাগিয়ে ভোটযুদ্ধে জিতেও এসেছেন তাঁরা। নির্বাচনের রাজনীতিতে ভোটই শেষ কথা। জনগণ যাঁকে বেছে নেবে, তিনিই নেতা। দলনির্ভর রাজনীতিতে ব্যক্তি অনেক সময় গৌণ হয়ে পড়ে। এতে রাজনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের রাজনীতিকে কলুষমুক্ত রাখতে নবীনদের জায়গা করে দিতে হবে।