সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সবদলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ৬টি সংসদীয় আসনে দাখিলকৃত ৬৬ মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৫১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ও ১৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থীদের যাচা-বাছাইয়ে বাতিল হওয়ার মধ্যে রয়েছে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, স্বাক্ষরে গরমিল, বিদ্যুৎবিল খেলাপি ও ঋণখেলাপি জন্য। তবে এসব বাতিল হওয়া প্রার্থীররা আপীলের সুযোগ পাবেন।
গতকাল রবিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে এই ৫১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ও ১৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় রিটার্নিং অফিসার একে একে বৈধ প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পাশাপাশি বাতিল হওয়া প্রার্থীদেরও নাম ঘোষণা করেন। রবিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত একটানা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই চলে। আগামী ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং পরদিন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হচ্ছেন- সিলেট-১ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনের বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় তার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সিলেট-২ (ওসমানী নগর-বিশ্বনাথ) আসনে মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. এনামূল হক সরদার, মুহিবুর রহমান ও আবদুর রবের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ও আব্দুল ওয়াদুদের মনোনয়ন বাতিল হয় মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষরে গড়মিল পাওয়ায়। এছাড়া একই আসনে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয় হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায়।
সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর) আসনে ইসমাইল আলী আশিকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্রে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী দাবি করলেও দলীয় মনোনয়ন জমা না দেয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয় সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে। এ আসনে মোট ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয় হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায়। এছাড়া বিদ্যুৎবিল খেলাপির জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী এম এ মতিন চৌধুরী, বিদ্যুৎবিল ও ঋণখেলাপির দায়ে ইসলামী আন্দোলনের নূরুল আমিনের, ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল ওয়ালীর এবং হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল মুনীরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানিবাজার) হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়ার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গড়মিল পাওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
মনোনয়নপত্র বৈধ প্রার্থীরা হচ্ছেন- সিলেট-১ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, জাপার মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, বাসদের উজ্জল রায়, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রণব জ্যোতি পাল, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আলহাজ্ব মাওলানা নাসির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ফয়জুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ, ইসলামী আন্দোলনের রেদওয়ানুল হক চৌধুরী।
সিলেট-২ : আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহহিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. মোশাহিদ খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা কাজী আমিন উদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম. ইলিয়াস পত্মী তাহসীনা রুশদীর লুনা, ছেলে আবরাব ইলিয়াস, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী ও বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মো: আমির উদ্দিন।
সিলেট-৩ : আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল হক (এমএ হক), কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মো. আব্দুস সালাম, খেলাফত মজলিসের হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মতিন বাদশা, মাওলানা নজরুল ইসলাম, জাপার উছমান আলী ও মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ ও খেলাফত মজলিসের মো: দিলওয়ার হোসাইন।
সিলেট-৪ : আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী শামসুজ্জামান জামান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান, স্বতন্ত্র মনোজ কুমার সেন ও ইসলামী আন্দোলনের মো. জিল্লুর রহমান।
সিলেট-৫ : আসনে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার, বিএনপির মামুনুর রশিদ মামুন, শরিফ আহমদ লস্কর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, গণফোরামের মো: ববাহার উদ্দিন আল রাজি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. শহীদ আহমদ চৌধুরী।
সিলেট-৬ : আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিকল্প ধারার শমসের মবিন চৌধুরী, বিএনপির হোসেন খান হেলাল (হেলাল খান), ফয়ছল আহমদ চৌধুরী, জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ের মৌ: আসআদ উদ্দিন আল মাহমুদ ও বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মো: আজমল হোসেন।
বাছাই শেষে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাতিলকৃত প্রার্থীরা ইচ্ছে করলে আদেশের কপিসহ আপিল করতে পারবেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর বুধবার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট উপজেলায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৬৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে ১৮ নভেম্বর রবিবার থেকে মঙ্গলবার ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি আসনে মোট ৭৩টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে সিলেট-১ আসনে ১৩ জন, সিলেট-২ আসনে ১৪ জন, সিলেট-৩ আসনে ১৫ জন, সিলেট-৪ আসনে ৯ জন, সিলেট-৫ আসনে ১২ জন এবং সিলেট-৬ আসনে ১০ জন।