মানবিক দিক বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনেকেই আশ্রয়শিবির ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। একটি অংশের চেষ্টা রয়েছে এ দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাওয়ার। এমনিতেই কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গাদের বসবাসের কারণে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে চাইলে তারও বিরূপ প্রভাব পড়বে। আশ্রয়শিবির ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার সময় অনেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর তাদের আবার আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা। এখন তাদের সহায়তায় অনেকে অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিদেশে আগে থেকে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও একটি গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি সাজিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে সহায়তা করছে বলে আইওএমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।
বাংলাদেশের জনশক্তি বিদেশে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে। দেশে যে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তার একটি বড় অংশ আসে জনশক্তির মাধ্যমে। কিন্তু এই সেক্টরেও অনেক সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী সক্রিয়। ফলে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। বিদেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে যাওয়ার উদাহরণও কম নেই। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা যদি অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে তার দায় অনেকটাই বাংলাদেশের ওপর এসে পড়বে। এমনিতেই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর ওই এলাকায় অপরাধমূলক তৎপরতা বেড়েছে। আইওএম ও তার অংশীদাররা মানবপাচার ও শোষণের অন্তত ৯৯টি ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবপাচারকারীরাও রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সক্রিয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা পুরুষদের কেউ কেউ দাস জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে হবে। সব সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। কাজটি যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যত বেশিদিন এখানে অবস্থান করবে সমস্যা তত বাড়বে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।