সব ধরনের উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন ও তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। সেদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ধরেই এগোচ্ছে। এর স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত বৈশ্বিক মানব সম্পদ সূচকে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
আমাদের সমস্যার অন্ত নেই। উন্নয়নের প্রধান শর্ত অবকাঠামো উন্নয়নের দিক থেকে এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। ব্যাপক দুর্নীতি, ব্যাংকের টাকা লুট, চাঁদাবাজি, অসহনীয় যানজট—এসব দেখেশুনে মানুষ শুধু হতাশই হচ্ছে। এর মধ্যে যখন একটি-দুটি সুখবর পাওয়া যায় তখন যেন সামান্য হলেও আশার আলো দেখতে পায় মানুষ। মানবসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাস এবং নারী উন্নয়নের সূচকেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা আমাদের অবশ্যই আশান্বিত করে। প্রত্যাশিত আয়ু, সাক্ষরতা, শিক্ষা ও মাথাপিছু আয়সহ অনেক সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া একটি শিশু বিদ্যমান পরিবেশে শিক্ষা নেওয়ার পর পূর্ণ বয়সে তার উৎপাদনশীলতা হবে ৪৮ শতাংশ। ভারতে এই হার ৪৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৯ শতাংশ। সূচকের শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরে এই হার ৮৮ শতাংশ। বাংলাদেশে একটি শিশু ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত গড়ে ১১ বছর স্কুলে কাটায়। ভারতে এই সময় ১০ দশমিক ২ বছর এবং পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৮ বছর। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে এখন যাদের বয়স ১৫ বছর তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশের প্রত্যাশিত আয়ু হবে ৬০ বছরের বেশি। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা একই কাতারে। ভারতে প্রত্যাশিত আয়ুর এই হার ৮৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৮৪ শতাংশ। এতে দেখা যায়, মানব উন্নয়ন সূচকের প্রায় সব বিচারেই বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। অথচ স্বাধীনতার আগে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সব দিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এ সবই স্বাধীনতার ফসল। পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ না হলে বাংলাদেশ হয়তো এত দিনে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে পারত।
যেকোনো সাফল্য আমাদের আনন্দিত করে, উজ্জীবিত করে। সেটি ক্রিকেটের সাফল্য হোক, কিশোরী মেয়েদের ফুটবল জয়ের সাফল্য হোক কিংবা অর্থনীতির কোনো ক্ষেত্রের সাফল্যই হোক। জয়ের এই ধারায় বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রত্যাশিত আয়ু ও উৎপাদনশীলতায় আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক বিবেচনায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। দ্রুত আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কার্যকর ও মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান কমাতে হবে। লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কোনোক্রমেই পিছিয়ে থাকতে পারে না, এই বিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে।