একুশ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কাল

44

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহুল আলোচিত একুশ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল বুধবার। দীর্ঘ ১৪ বছর পর দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য) উভয়পক্ষের আইনী যুক্তি শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। এ উপলক্ষে আদালতসহ আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
এ মামলায় মোট ১৭৫৪ কার্যদিবসে বিচারিক কার্য সম্পাদন করা হয়। আইনী পয়েন্টে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি করেছে ৩০ ও আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছে ৯০ কার্যদিবস। এ ছাড়া আসামি পক্ষ মামলাটি দীর্ঘায়িত করতে হাইকোর্টে ৫ বার বিভিন্ন আবেদন নিয়ে যায়। এতে বিচারিক আদালতের ২৯৪ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। ২১ আগষ্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মোট আসামির সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে ৩ আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮ জন পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ নিজেদের পক্ষে রায় যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যুক্তিতর্কের শেষদিন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেছেন, আমাদের প্রত্যাশা, আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহের উর্ধে থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২১ আগষ্ট হামলা ইতিহাসের সবচাইতে নৃশংস, জঘন্যতম ও বর্বরোচিত হামলা। নিরস্ত্র মানুষের ওপর আর্জেস গ্রেনেডের মতো সমরাস্ত্র ব্যবহার এ উপমহাদেশে আর নেই। তারা এ মামলার সাফল্যের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, এই মামলার কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। এ মামলা ভিত্তিহীনভাবে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ মামলায় কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের জন্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। এবং তাদের খালাসের আর্জি জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল বলেন, বুধবার সকালেই আমরা আদালতে যাব। আমাদের প্রত্যাশা, সকল আসামিই সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারিজ চৌধুরীসহ ৪৯ আসামি রয়েছে। মোট ৫২ আসামির মধ্যে ৩ আসামির জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানসহ এখনও ১৮ আসামি পলাতক।
১৮ পলাতক আসামির মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা তাইজউদ্দিন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ব্যবসায়ী মোঃ হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গির আলম বদর, মোঃ খলিল, মোঃ ইকবাল, মাওলানা লিটন, মুফতি আবদুল হাই,সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান, খান সাঈদ হাসান।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। বিচারের মুখোমুখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে এতদিন জামিনে ছিলেন-বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মোঃ আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। ঐ দিন তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া কারাগারে আগে থেকে আটক রয়েছেন তারা হলেন, উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হোসেন ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মোঃ উজ্জল ওরফে রতন, মোঃ লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুর রহিম, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মোঃ আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বি, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ , হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবুল বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। উল্লেখ্য, এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা (প্রয়াত)আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন।