গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একটি আস্তানা থেকে দুজনের ছিন্নভিন্ন লাশ, একটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি অবিস্ফোরিত আইইডি, তিনটি পিস্তল, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব। অভিযানের পর র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে তারা জানতে পারে, একটি গ্রুপ চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে এবং তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আছে। ওই এলাকায় বেশ কয়েকজন জঙ্গি এখনো সক্রিয়। স্বাভাবিকভাবেই এটা ধারণা করা যায় যে শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারা দেশেই জঙ্গিরা সক্রিয়। গোপনে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গিরা তাদের শক্তি জানিয়ে দিয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরবর্তী সময়ে বেশ কিছুদিন জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে নতুন করে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। শুরু হয় টার্গেট হত্যাকাণ্ড। আত্মঘাতী বোমা হামলা, অতর্কিতে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে হত্যা ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। ২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। এরপর র্যাব-পুলিশের অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জঙ্গি নিহত হয়। অনেকে আটক হয়। আবার কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় জঙ্গি তৎপরতা। জঙ্গি তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে বা জঙ্গি দমন করা পুরোপুরি সম্ভব হয়েছে, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। প্রকাশিত খবরেই জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের ওই এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা গোপনে হলেও চলছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশেই জঙ্গিরা গোপনে গোপনে তৎপর। তাদের এই তৎপরতা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। সাধারণ নির্বাচন যখন এগিয়ে আসছে তখন জঙ্গিদের দিকে অতিরিক্ত দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
জঙ্গিরা যে নানামুখী যোগাযোগ গড়ে তুলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের আগে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। নতুন করে জঙ্গি উত্থানের আশঙ্কা মাথায় রেখে এখন থেকে বাড়াতে হবে গোয়েন্দা তৎপরতা। পরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের চৌকস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে আরো তৎপর হবে।