থমকে গেছে ঐক্য, বিএনপির প্রতি জামায়াত ছাড়ার জোর দাবি

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে নিয়ে গ্যাঁড়াকলে বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিষয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলে বিএনপিকে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতা অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়ার কথা বলে এখনও জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা না দেয়ায় জাতীয় ঐক্যের নেতা ড. কামাল হোসেন বিব্রত। বিএনপির তৃণমূল নেতারা জামায়াত ত্যাগের পক্ষে থাকলেও দলীয় হাইকমান্ড কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ড. কামাল, বি. চৌধুরী ও বিএনপি জোটের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ঐক্য’ সুদূর পরাহত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপরীতে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা বিএনপির ডাকে কোন রাজনৈতিক দলই তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর একপর্যায়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজার স্মরণাপন্ন হয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা। পরে ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক জোট ঐক্য প্রক্রিয়া ও অধ্যাপক ডাঃ বি চৌধুরীর রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্ট মিলে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিলে বিএনপিও তাদের সঙ্গে শামিল হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। কিন্তু ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বিএনপিকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাঁকজমক সমাবেশের আয়োজন করেন জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে বিএনপি যোগ দেয়ায় ওই সমাবেশ বয়কট করে আগে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ। যুক্তফ্রন্ট নেতা ও সমাবেশের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও বয়কট করতে পারেন এমন পূর্বাভাস পেয়ে আগের দিন রাতে তাঁর বাসায় ছুটে যান বিএনপির ৩ সিনিয়র নেতা। অতীত কর্মকান্ডের জন্য বি. চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বি. চৌধুরীকে সমাবেশে যোগ দিতে রাজি করান তারা।
বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের ডাকে সমাবেশে যোগ দিলেও বাম জোটের নেতা জোনায়েদ সাকী ও যুক্তফ্রন্ট নেতা বি. চৌধুরী জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। বি চৌধুরী স্পষ্ট করেই বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে কোন ঐক্য হবে না। বি চৌধুরীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই ‘জাতীয় ঐক্য’ অনিশ্চত হয়ে পড়ে। তারপরও বিএনপি এই ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গোপনে বিভিন্ন মহলের কাছে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকে। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে এখনও জামায়াত ত্যাগের ঘোষণা না দেয়ায় বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে বি. চৌধুরী বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে নতুন সঙ্কটের মুখোমুখি হয় বিএনপি। তারা না পারছে ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের দাবি পূরণ করে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাদ দিতে, না পারছে জামায়াতকে সঙ্গে রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করতে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট হবে কি না এ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চিয়তা।
যুক্তফ্রন্ট নেতা ও বিকল্প ধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে আমরা বিব্রত, কারণ এখনও তারা জামায়াতকে ছাড়ার ঘোষণা দেয়নি। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে নিয়ে বৃহত্তর জোট করব না। বিএনপিকে ‘জাতীয় ঐক্যে’ শামিল হতে হলে প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। তা না হলে বিএনপিকে আমরা নেব না।
যুক্তফ্রন্ট নেতা ও জাসদ সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেছেন, আমরা আগেই বলেছি বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে আমরা তাদের সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্য’ করব না। কিন্তু বিএনপি এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি। তাই আমাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপি থাকার কোন সুযোগ এখনও সৃষ্টি হয়নি।
জানা যায়, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের থাকা না থাকার বিষয়টি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হবে ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির সমাবেশে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী শনিবার বিএনপির জনসভায় দলের ভবিষ্যত কর্মপন্থা ও কর্মসূচীর কথা জানানো হবে।