কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রস্তুতি নেয়ার পরও মিয়ানমার সরকার একের পর এক অজুহাত তোলায় কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার নিউইয়র্ক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা এই শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ দেয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তিনি বলেন, এমনিতেই আমার দেশে ১৬ কোটি মানুষ আছে। এরপর আরও ভার নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এটা নিতে পারি না। আমার দেশ এই ভার বহন করতে পারবে না।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত বছর আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এর দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি।
সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হোক, তা তিনি চান না। তবে মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী নেত্রী আউং সান সুচি এবং দেশটির ‘মূল ক্ষমতা’ যাদের হাতে, সেই সেনাবাহিনীর কথায় আস্থা রাখার মত ধৈর্য যে ধীরে ধীরে কমে আসছে, সে ইঙ্গিতও শেখ হাসিনার কথায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এর আগেও একাধিকবার মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রয়টার্স জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রতিক্রিয়া তারা জানতে পারেনি। মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ তাই এর আগে বলেছিলেন, টেলিফোনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন জবাব তিনি আর দেবেন না। দুই সপ্তাহে একবার তিনি ব্রিফ করবেন, সেখানে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে।
প্রযুক্তি হস্তান্তর সহজ করার আহ্বান : এদিকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্প খরচে প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে স্বল্প ব্যয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তরে বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি দায়িত্ব রয়েছে।’ শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরের প্লেনারি হলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক এক প্লেনারি সেশনে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
ডব্লিওইএফের বার্ষিক সভায় যোগদানের আমন্ত্রণ : বাসস অপর এক খবরে জানায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিওইএফ) প্রেসিডেন্ট বোর্গে ব্রেনডি আগামী জানুয়ারি মাসে সুইজারল্যান্ডের দ্যাভোসে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর নিউইয়র্কে অবস্থানকালীন হোটেল গ্রান্ড হায়াতে সৌজন্য সাক্ষাতে ব্রেনডি এই আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ডব্লিওইএফ প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে জানান, প্রায় একশ দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ এবং সেইসঙ্গে বৃহৎ বিনিয়োগকারীগণ ডব্লিওইএফের এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে থাকেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দেশে বিনিয়োগ এবং উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এদিন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমার সঙ্গেও বৈঠক করেন।
রানী ম্যাক্সিমা একই সঙ্গে যিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের বিশেষ দূত, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের থেকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সূচকে এগিয়ে আছে। তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমিন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।