চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে গতকাল ১৮ মে ২০ মে চা শ্রমিক দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে। ভোর থেকেই অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় কর্মসূচিটি সংক্ষিপ্ত করা হয়। দুপুর ১২টায় সিলেট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এর পূর্বে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ এবং সমাবেশ শেষে নগরীতে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অধীর বাউরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ইমজা সিলেট’র সাধারণ সম্পাদক আনিস রহমান, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার নেতা অজিত রায়, সামাজিক সংগঠন ঊষা’র পরিচালক নিগাত সাদিয়। এতে বক্তব্য রাখেন চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক সঞ্জয় কান্ত দাস, আনহাফ রহমান হান্নান, আমিনূল হক, সঞ্জীত বাউরী, স্বপ্না বাউরী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, চা শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলনের শতবর্ষ পূর্ণ হবে আগামী ২০ মে। আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের মেঘনা ঘাটে বেনিয়া বৃটিশ সরকারের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয় শত শত চা শ্রমিককে। বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয়ে চা শ্রমিকরা বর্জন করেন ইংরেজ মালিকদের চা বাগান। বাগান ছাড়া যেহেতু যাবার আর জায়গা নেই, তাই তাঁরা নিজের পূর্ব পুরুষের ভিটায় ফিরে যেতে চাইলেন। দীর্ঘপথ পায়ে হেটে তাঁরা পৌঁছান চাঁদপুরে। শ্রমিকদের বাগানে ফেরত আনার জন্য চালানো হয় গুলি। শত শত চা শ্রমিক মারা যান, গ্রেফতার করা হয় চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত গঁঙ্গা দয়াল দীক্ষিত ও দেওশরনকে। জেলে অনশন করে আত্মহুতি দেন পন্ডিত গঁঙ্গা দয়াল দীক্ষিত। চা শ্রমিকদের এই গৌরবদীপ্ত লড়াই ইতিহাসে চরগুলা এক্সডাগস নামে খ্যাত। এই হত্যাকান্ড গোটা ভারতবর্ষে আলোড়ন তৈরি করে। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘটে সামলি হয়। এগিয়ে আসেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, হরদয়াল নাগ, কাজেম আলী মাষ্টার, বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেন, মহিম ত্রিপুরা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। আন্দোলনের শুরু থেকে যুক্ত ছিলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেন।
ঐতিহাসিক এই মুল্লুকে চল আন্দোলনটি চা শ্রমিকদের প্রথম সংগঠিত সংগ্রাম। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করেন চা শ্রমিকরা। ৬৯‘র-গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হন নীরা বাউরী,বসন্ত বুনার্জীসহ অনেকে। পরবর্তীতে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত সাহসের সাথে লড়েছেন চা শ্রমিকরা। আর এ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ২০ মে ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলনের চেতনা। সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ যেমন এক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, একই রকম এই ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলন। বর্তমান বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ চা শ্রমিক। অর্থকরী ফসল হিসেবে চা অন্যতম। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে চা জনগোষ্ঠির যেমন বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ আছে, একই রকম বর্তমানে দেশের অর্থনীতির চাকাকেও সচল রাখছেন তাঁরা। তাই ঐতিহাসিক ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলনরে শতবর্ষে দাঁড়িয়ে দিবটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই যৌক্তিক।” বক্তারা চা শ্রমিক দিবসের স্বীকিতি আদায় ও ২০ মে বাগানে বাগানে শহীদ স্মরণের আহ্বানের পাশাপাশি শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সার্বিক মুক্তির সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি