স্পোর্টস ডেস্ক :
গত তিনটি এশিয়া কাপের দুটিতেই ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বকাপ হিসেবে বিবেচিত এ আসরে এবারও ফাইনাল খেলার আশা নিয়েই আরব আমিরাতে গেছে টাইগাররা। কিন্তু সেই আশা নিভু নিভু হয়ে গিয়েছিল টানা দুই ম্যাচে শোচনীয় পরাজয়ে। ৪ দিনে ৩ ওয়ানডে ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে গড়ে ৪৪ ডিগ্রী তাপমাত্রায় খেলাটা মরুর দেশ আরব আমিরাতে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের জন্য ছিল অনেক কঠিন। সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সেই দলটি যখন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছিল, আত্মবিশ্বাস চিড়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই একটি জয় আবার অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছে। রবিবার আবুধাবিতে সুপার ফোরের ডু-অর-ডাই ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩ রানে হারিয়ে নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল। এবার এশিয়া কাপের তৃতীয় ফাইনালে খেলার জন্য বুধবার পাকিস্তানকে হারালেই চলবে। সেই ম্যাচে দৃঢ় মানসিকতায় শক্ত মনোবল নিয়েই নামার রসদ পেয়ে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজা বাহিনী।
একটি জয় পাল্টে দিতে পারে দলের সামগ্রিক চেহারা। ঘুচে যেতে পারে আক্ষেপ, ভুলিয়ে দিতে পারে সব হতাশা এবং মুছে যায় সব গ্লানি। সেই জয়ের দেখা পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। নিজেদের চেয়ে নিচু সারির দল উঠতি ক্রিকেট শক্তি আফগানিস্তানের কাছে ১৩৬ রানে বিধ্বস্ত হওয়া এবং ওপরের সারির দল, ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতের কাছে বড় পরাজয় গ্লানি এনে দিয়েছিল। ছোট্ট শক্তি আর বড় শক্তির দ্বিমুখী চাপে মাঝখানে স্যান্ডউইচ হয়ে পড়া বাংলাদেশ চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছিল। জয় আসাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল এত বড় বড় হারে! কিন্তু দারুণভাবেই ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। টানা ৪ দিনে দুটি ভিন্ন ভেন্যুতে তীব্র গরমের মধ্যে খেলে নাভিশ্বাস ওঠা টাইগারদের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল মর্যাদা রক্ষা। রবিবার সেই কাক্সিক্ষত জয় যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকা দলের জন্য হয়ে এলো দিক নির্দেশনার আলোকবর্তিকা হয়ে। জয়ের ব্যবধান যদিও যৎসামান্য, দুর্বার হয়ে ওঠা আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটাই এখন বড় মানসিক শক্তি হয়ে এসেছে বাংলাদেশের জন্য। কারণ, এই ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি টাইগাররা জয় করেছে অনেক কিছুই। তীব্র গরমের মধ্যে টানা ম্যাচ খেলার শ্রান্তির মধ্যে স্থায়ুচাপ, টিকে থাকার চাপ এবং ডেথ ওভারে হেরে যাওয়ার পূর্ব তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার মনোবল পেয়েছে বাংলাদেশ।
শেষ ওভারের নাটকীয়তায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ আগে বেশ কয়েকবার। জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচগুলো ছিল অভিজ্ঞতার অভাব কিংবা স্থায়ুচাপ সহ্য করার শক্তিহীনতা। সেসবকে কাটিয়ে ওঠা গেছে এক ম্যাচেই। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর বেশ কিছু ম্যাচে শেষ ওভারে গিয়ে হেরেছিল। যার সবশেষ উদহারণ শ্রীলঙ্কায় গত মার্চে অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল। এছাড়া ২০১২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ২ রানে এবং ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ১ রানে হারের কথা বিশ্ব ক্রিকেট কখনোই ভুলবে না। এই প্রথম ঘটনার বৈপরিত্য দেখা গেছে। রবিবার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান জয়ের খুব কাছে গিয়েও জিততে পারেনি। শেষ ওভারের নাটকীয়তা এবার বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। এ বিষয়ে জয়ের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ম্যাচ জেতার অনুভূতি কখনোই প্রকাশ করা যায় না। বাংলাদেশের হয়ে যেকোন ফরমেটে যেকোন ম্যাচ জয়ই ভাল লাগার। তবে বেশি ভাল লাগছিল যে আমরা অনেকবারই ৬ বলে ৮ বা ৯ রুখে দিতে পারিনি। আজকে আমাদের বোলাররা এটা ডিফেন্ড করেছে। এটা দারুণ তৃপ্তির।’ আবার তাই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল। অনুপ্রাণিত এই দলটি এবারও এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্নটাকে বাস্তব করার তীব্র মানসিক শক্তি পেয়ে গেছে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপ ফাইনালের পর এবারও এশিয়া কাপ ফাইনালে খেলার সুযোগ। সুযোগ লাভের কাছাকাছি এখন টাইগাররা। বুধবার পাকিস্তানের বাধা পেরোতে পারলেই আরেকবার ফাইনালে অবতীর্ণ হবে বাংলাদেশ দল। সে লড়াইয়ে জেতার জন্য যথেষ্ট রসদ পেয়ে গেছে মাশরাফিরা সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।