কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের ৭২তম স্বাধীনতা দিবসে জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার সকালে দিল্লির লালকেল্লার মঞ্চ থেকেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনী প্রচারের পতাকা তুলে ধরলেন নরেন্দ্র মোদি।
গত চার বছরে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান পেশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে আগামী দিনে সরকারের একাধিক পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করলেন।
পাশাপাশি মোদির দাবি, দলের স্বার্থ নয়, দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেই যে কোনও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না তিনি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শেষ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে প্রকাশ, লালকেল্লা থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি নাগরিকপঞ্জি থেকে শুরু করে জিএসটি, অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে বিরোধীদের জবাব দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সরকারের লক্ষ্যের কথাও জানালেন। তার মধ্যে যেমন ছিল, ২০২২-এর মধ্যে একজন ভারতীয়কে মহাকাশে পাঠানোর লক্ষ্য। তেমনই ছিল, প্রত্যেক ভারতীয়’র জন্য স্বাস্থ্যবিমা যোজনার লক্ষ্য।
নিজের ভাষণে মোদির দাবি, গত চার বছরে এ দেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে। ২০১৩- গতিতে উন্নয়ন হলে একশ’ বছরেও ঘরে ঘরে পৌঁছাত না বিদ্যুৎ। গরিবরা এলপিজি গ্যাস পেতেন না। কিন্তু সরকারের একাধিক দ্রুত সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বহু নাগরিক তার সুফল ভোগ করছেন। এরমধ্যে রয়েছে জিএসটি এবং নোটবন্দির মতো ব্যবস্থা। তিনি আরও জানান, এক সময়কার দুর্বল অর্থনীতির ভারত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এখন বিশ্বের ষষ্ঠতম শক্তিশালী দেশ।
এনডিএ সরকারের সাফল্যের খতিয়ান ছাড়াও আগামী দিনে দেশের মহাকাশ অভিযানের লক্ষ্যের কথাও ঘোষণা করেন মোদি।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে ভারত যখন তার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করবে, সম্ভব হলে তার আগেই মহাকাশে দেশের পতাকা উড়বে।’ এই স্বপ্ন সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর ভারতই হবে বিশ্বের চতুর্থ দেশ যাদের নাগরিক মহাকাশ পাড়ি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর গোটা পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো’র চেয়ারম্যান কে শিবন।
তিনি বলেন, ‘গত এক দশক ধরেই মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইসরো।’
‘ব্যোম’ নামের ওই প্রকল্পে ‘গগনযান’ চড়ে মহাকাশে যাবেন ভারতবাসী। ওই মহাকাশচারীকে ‘ব্যোমচারী’ হিসেবে উল্লেখ করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের।
মহাকাশ অভিযানের লক্ষ্যে ছাড়াও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা যোজনারও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিবস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ নামে ওই যোজনা চালু করা হবে। এই যোজনায় ১০ কোটিরও বেশি পরিবার উপকৃত হবে বলে দাবি মোদির। তিন তালাক নিয়েও এদিন বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, ‘তিন তালাকের প্রথা মুসলিম নারীদের জীবনে অনেক কষ্ট নিয়ে এসেছে। আমরা এই প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও কেউ কেউ আমাদের এই কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন, তবুও আমি প্রত্যেক মুসলিম নারীকে কথা দিচ্ছি, তারা যাতে সুবিচার পান তা আমি সুনিশ্চিত করব।’
কাশ্মির নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, নির্যাতন ও বুলেটের পথে তার সরকার হাঁটতে চায় না। তিনি সবাইকে আপন করে নিয়ে চলার নীতিতেই বিশ্বাসী। তার বক্তৃতায় এদিন উঠে আসে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রসঙ্গও।
তিনি বলেন, ‘অটলজী কাশ্মিরের ক্ষেত্রে ইনসানিয়াত, কাশ্মিরিয়াত এবং জামুরিয়াতের ভাবনাকে আপন করে নিয়েছিলেন। আমারও একমত। কাশ্মিরের সব সমস্যার সমাধান সম্ভব শান্তির পথে হেঁটে।’