বালাগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি নিয়ে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র লঙ্গনের অভিযোগ ওঠেছে। সংগঠনের জেলার কতিপয় নেতারা বিতর্কিত কমিটি দিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করিয়েছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে নাটকীয় ষড়যন্ত্র করছেন বলে অনেকেইে প্রশ্ন তুলেছেন। জেলা কমিটির কতিপয় নেতৃবৃন্দরা এক তরফা ভাবে উপজেলা পূজা পরিষদের কমিটি দেয়ায় এখানকার যোগ্য নেতৃবৃন্দরা হতাশ হয়েছেন। এছাড়া বিতর্কিত কমিটির নেতৃবৃন্দের মনগড়া আচরণে উপজেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে- আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন এবং বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে সংগঠনের গতিশীলতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অভিভাবক হিসেবে যাদের ভূমিকা পালন করার কথা এখন তারাই একেক সময় একক ধরনের কথা বলে আসছেন। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের একটি নীলনকশা হিসেবে জেলা কমিটির দায়িত্বশীলরা এই বিতর্কিত কমিটি দিয়ে উপজেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করিয়েছেন। সংগঠনের জেলা কমিটির নেতারা উপজেলার নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলদের নিয়ে রীতিমত তামাশায় মেতে ওঠেছেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করলেও জেলার নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের ডিঙিয়ে এক তরফা ভাবে বিতর্কিত কমিটি দিয়ে নতুন নাটকের জন্ম দিয়েছেন বলে সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলরদের অভিযোগ।
জানা যায়, গত ৫ মে সম্মেলনের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা পূজা পরিষদের কমিটির গঠনের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জেলার নেতাদের মনোনিত লোকজনকে দিয়ে কমিটি ঘোষণা করায় সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলররা ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে জেলার নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু জেলার নেতারা কেন্দ্রের নির্দেশের কথা স্বীকার করলেও তারা বিভিন্ন ভাবে তালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করেন। পরবর্তী সময়ে জেলার নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ১৩ জুলাই একটি মনগড়া কমিটি দিয়ে আবারো বিতর্কের সৃষ্টি করেন বলে সংগঠনের উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দের অভিযোগ। এদিকে- ১৩ জুলাই বিতর্কিত কমিটির বিষয়টি জানাজানি হলে নেতৃবৃন্দের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হন। ওই বিতর্কিত কমিটির জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলররা রঞ্জন ঘোষকে এক তরফাভাবে দায়ি করে আসছিলেন। অন্যদিকে- বিতর্কিত কমিটি দেয়ার পর নেতৃবৃন্দরা ফুঁসে ওঠে ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদি অবস্থান নেন। বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ায়।
পূনরায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে কমিটি দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের নেতারা সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত সেন দিপুকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু জয়ন্ত সেন দিপু ঢাকা থেকে সিলেট এসে এক সপ্তাহ অবস্থান করলেও উপজেলা পর্যায়ের কাউন্সিলরদের সাথে কোনো যোগাযোগ কিংবা বিষয়টির কোনো সূরাহা না করে ঢাকায় ফিরে যান বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সংগঠনের উপজেলা শাখার একাধিক নেতা ও কাউন্সিলররা জানান- কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনের বিষয়টি কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে ছিল। সেখানে সংগঠনের জেলার শাখার সেক্রেটারীসহ কতিপয় নেতারা একের পর এক বিতর্কিত কমিটি দেয়ায় এটাই প্রমাণিত হচ্ছে এখানে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিহিত রয়েছে।
ওসমানীনগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতা সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য ভাস্কর দত্ত বলেন- স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে মূল্যায়ন না করে জেলা কমিটির কতিপয় নেতারা ইচ্ছেমত মনগড়া কমিটি দিয়েছেন। এতে স্থানীয় কাউন্সির ক্ষুব্ধ হয়ে জেলার নেতাদের কাছে লিখিত আবেদন দিলেও তারা বিষয়টি আমলে না নেয়ায় নির্বাচিত কাউন্সিলরসহ উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এতসবের পর বিষয়টি কোন সুরাহা না করে পক্ষাবলম্বন করে বির্তকতদের দিয়ে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছেন জেলা কমিটির দায়িত্বশীল এক নেতা। সংগঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক অরুণ দেবনাথ সাগর বলেন- সম্মেলন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিনে কাউন্সিলররা দাবি তুলেছিলেন নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য। আমরা জেলা নেতৃবৃন্দরা কাউন্সিলরদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কে বা কারা কাউন্সিলরদের সাথে কোন আলোচনা বা নির্বাচন ছাড়াই কমিটি ওসমানীনগরে কমিটি দেয়া হয়েছে বলে আমি বিষয়টি শুনেছি। সংগঠনের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত সেন দিপু বলেন,ওসমানীনগরে পূজা পরিষদের কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনে আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ সমঝোতায় আসতে না চাইলেতো আমাদের কিছু করার নেই।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী বলেন, আমরা তো আর কেন্দ্র থেকে উপজেলার বিষয়গুলো দেখতে পারি না, তাই কমিটি নিয়ে ঐক্যৈর বিষয়টি সমাধানের জন্য সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলে দিয়েছিলাম।