কাজিরবাজার ডেস্ক :
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, অরাজকতা চলতে থাকবে আর পুলিশ চুপ করে বসে দৃশ্য দেখবে এটা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরও ধৈর্যের সীমা আছে, সীমা অতিক্রম করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘ট্রাফিক সপ্তাহ’ উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জেরে পরদিন থেকে সড়কে নেমে এসে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
টানা সাত দিন পর রবিবার থেকে ছোটরা রাজপথ ছাড়লেও আগের দিন সংঘর্ষে যারা শিক্ষার্থীদের আহত করেছে তাদের শাস্তির দাবিতে সড়কে জড়ো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আর এসব প্রতিক্রিয়ায় সাত দিন ধরে রাজধানীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রীতিমতো স্থবির হয়ে রয়েছে। বন্ধ দূরপাল্লার যানবাহনও। যারা শুরুতে শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন, তারাও গত কয়েকদিন ধরে বিরক্তি প্রকাশ করে আসছিলেন। সরকারের পাশাপাশি তারাও আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তারা যেন উঠে যায়।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করতে পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক মাধ্যমে যাতে বলা হয় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালযে চারজন শিক্ষার্থীকে হত্যা এবং চার কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমজুড়ে শুধু মিথ্যাচার আর গুজব। একজন অভিনেত্রী শনিবার কীভাবে কথাগুলো বললেন, কীভাবে অভিনয়টা করলেন আপনারা দেখেছেন। একটি মহল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দাবি ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে এই অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে।’
বিএনপি নতো আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল নেতা কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে আক্রমণ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।’
‘ঢাকায় প্রবেশের সময় আমরা এমন সব ছাত্র নামধারী লোকজনকে আটক করেছি যাদের ব্যাকপ্যাক ভর্তি পাথর। এ কয়েকদিনে হাজার হাজার স্কুলড্রেস তৈরি করা হলো, হাজার হাজার আইডিকার্ড বানানো হলো। আইডিকার্ড ঝুলিয়ে অছাত্ররা কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনে প্রবেশ করেছে।’
পাকিস্তান-দিল্লির বিভিন্ন ঘটনা এ দেশের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। তারা যদি এসব অপতৎপরতা পরিহার না করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ট্রাফিক সপ্তাহ : ট্রাফিক সপ্তাহ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেউ ট্রাফিক আইন মানি না। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতেই দেশব্যপী ট্রাফিক সপ্তাহ। সারাদেশে দুর্ঘটনার মাত্রা এতো বেড়ে গেছে, যা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আইন মানলে দুর্ঘটনা কমে আসবে, জনদুর্ভোগ কমবে।’
‘ট্রাফিক সপ্তাহ উদ্বোধনের মাধ্যমে আইন মেনে চলার প্রক্রিয়া শুরু হলো, সারা বছর যেন এটা চলমান থাকে সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক আইন নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি বলেন, ‘আশা করব কেউ অযথা রাস্তায় জমায়েত করে জনগনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত করবেন না।’
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ডিএমপিতে যানজট সবচেয়ে বড় সমস্যা। সমাধানে সকলে মিলে সবসময় পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের আইন না মানার প্রবণতাই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হবে।’
‘আজ থেকে স্কাউট ও গার্লস গাইডের সহযোগিতায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কেউ যদি এর সঙ্গে সহায়তা না করে উল্টো রাস্তায় নেমে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।’
এই সপ্তাহে আগামী ১১ আগষ্ট পর্যন্ত যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, ইনস্যুরেন্সসহ নানা কাগজপত্র ও এসবের মেয়াদ যাচাই-বাছাইয়ের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহে প্রভাবশালীদের আইন না মানার প্রবণতা বন্ধ ও সাধারণ জনগণকে রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।