অঘোষিত ধর্মঘট চলছে ॥ তৃতীয় দিনেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

71

স্টাফ রিপোর্টার :
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সিলেট থেকে দূরপাল্লার সকল যাত্রীবাহী বাস চলাচল তৃৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রেখেছেন। এতে সিলেট থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম জনদুর্ভোগে। এদিকে অঘোষিত ধর্মঘটের ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে ট্রেনে। যাত্রীরা শেষ ভরসা হিসেবে ট্রেনকেই গন্তব্যে পৌছার শেষ বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
‘নিরাপত্তার’ অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকদের ‘আন্দোলনে’ অচল রয়েছে সিলেট। এখনও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি শহরে হালকা যানবাহনও চলাচল করতে দিচ্ছেন না শ্রমিকরা। লাঠিহাতে রাস্তায় অবস্থান করে গাড়ি আটকাচ্ছেন তারা। গতকাল রবিবার নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপরীতে শ্রমিকরা নগরী প্রবেশদ্বার চন্ডিপুল ও হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বরে বন্ধ করে লাঠিহাতে রাস্তায় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। পুলিশের উপস্থিতির পরও গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছেন তারা। এদিকে শনিবারও একইভাবে রাস্তায় গাড়ি আটকাতে দেখা যায় শ্রমিকদের। এ্যাম্বুলেন্স-বিদেশগামী যাত্রী কাউকে ছাড়েননি শ্রমিকরা। শহরের কয়েকটি স্থানে গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের ওপর চড়াও হন শ্রমিকরা। এ সময় কয়েকজন যাত্রীকে তারা মারধরও করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, দুপুরে ফের নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থায় নেয় ছাত্ররা। এসময় পাশেই চৌহাট্টা-রিকাবিবাজার সড়কে হাতে লাঠি নিয়ে গাড়ি আটকাতে দেখা যায় মাইক্রোবাস শ্রমিকদের। শ্রমিক ও ছাত্ররা যাতে সংঘাতে না জড়ায় এ জন্য চৌহাট্টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। পরে পুলিশের ২০ মিনিটের আল্টিমেটামে স্থান ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সুযোগে নগরী যানবাহন চলাচল না করায় রিকশা চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল রবিবার সকালে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা,লেগুনা ও বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। নগরীর বাস টার্মিনাল কদমতলী থেকে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সুনামগঞ্জ, জগন্নাতপুরের দিকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ওইসব এলাকা থেকে কোনো বাস আসেনি। র্কোট পয়েন্ট থেকে হুমায়ুন চত্বর হয়ে বিভিন্ন রুটে যেসব টাউন বাস চলে তাও বন্ধ। আম্বরখানা থেকে সালুটিকরের উদ্দেশে কোনো অটোরিকশা ছেড়ে যায়নি। নগরীর ধোপাদিঘীর পাড় থেকে বটেশ্বর, জৈন্তাপুর ও টুলটিকর রুটে কোনো লেগুনা, অটোরিকশা চলেনি। ওই সব গন্তব্য থেকে বন্দরবাজারের দিকেও কোনো লেগুনা, অটোরিকশা চলাচল করছে না। কদমতলীতে বাসের অপেক্ষায় অনেক মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সোবহানী ঘাট ও কুমারগাঁও বাস স্টেশনেও একই চিত্র। তবে আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে।
সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সামছুল হক মানিক বলেন, আমরা গাড়ি ছাড়তে প্রস্তুত আছি। কিন্তু সড়কে নিরাপদ বোধ করছি না। সিলেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলাতেও ছাত্ররা অবরোধ করে রেখেছে। বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে, শ্রমিকরা আহত হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট পরিবহন মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, যাত্রী, চালক ও গাড়ির নিরাপত্তার জন্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও হালকা যানচলাচলে বাধা না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের রেষারেষিতে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কে নামে শিক্ষার্থীরা। এরপর বৃহস্পতিবার ২ আগস্ট সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মানার ঘোষণা দিয়ে তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানানোর পরপরই অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।