ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট’১৮ ॥ ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মিলনমেলা

121

মাসুদ আল রাজী

গত ২৭ ও ২৮ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের সকল ক্যা¤পাসের সাংবাদিকদের নিয়ে প্রথমবারের মত দুই দিন ব্যাপি “ন্যাশনাল ক্যা¤পাস জার্নালিজম ফেস্ট’১৮”। অনুষ্ঠানে দেশের ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিনশত সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। ক্যা¤পাস সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে মেল বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এ ফেস্টের আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে মিলনমেলার পাশাপাশি ছিলো ক্যা¤পাস সাংবাদিকতার সমস্যা, সম্ভাবনা ও সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২৮ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে পায়রা উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরবর্তীতে সেখান থেকে ক্যা¤পাসে একটি আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন শাবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমদ, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর বিজনেস এডিটর ফারুক মেহেদী, ডেইলি বাংলাদেশ কন্ঠ’র স¤পাদক ফারুক খান ও বাংলাদেশ জার্নালের যুগ্ম বার্তা স¤পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোর মান খুবই খারাপ হয়ে গেছে। কেননা এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লবিংয়ের মাধ্যমে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়। যাদের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার যোগ্যতাই নাই।”
ক্যা¤পাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, “সাংবাদিকদের অনেকেই বলেন আমি নিরপেক্ষ। নিরপক্ষে বলতে তোমরা কি বুঝ? ন্যায় আর অন্যায়ের মাঝখানে যেটা সেটাতো নাকি? কিন্তু না, আমি সব জায়গায় নিরপেক্ষ থাকবো না। আমাকে যদি ন্যায় এবং অন্যায়ের মাঝখানে নিরপক্ষে থাকতে বলা হয়, তবে আমি ন্যায়ের পক্ষেই থাকবো। এটা খেয়াল রাখতে হবে। নিরপেক্ষ শব্দটার মাধ্যমে তোমাদেরকে যেন ভুল পথে পরিচালিত না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
সকাল ১০ টায় লার্নিং লার্নিং সেশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা শোনান মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বদরুদ্দোজা বাবু, যমুনা টেলিভিশনের মুহসিনুল হাকিম, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বিজনেস এডিটর ফারুক মেহেদী।
বিকেল ৫টায় আগত সকল অতিথিদেরকে সমগ্র ক্যা¤পাস ঘুরিয়ে দেখানো হয় ।
পরদিন ২৯ জুলাই শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে গ্র“প আলোচনায় অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন বিবিসি বাংলা এর বাংলাদেশ ব্যুরো এর প্রধান আকবর হোসেন, সমকালের যুগ্ম বার্তা স¤পাদক রমাপ্রসাদ সরকার বাবু, শাবি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু। অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ।
বেলা আড়াইটায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভারের স¤পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সম্মানিত অতিথি শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি একুশে টিভির প্রধান স¤পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
বিকেলে চারটায় “কেমন চাই আগামীর ক্যা¤পাস” উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শাবিপ্রবি ক্যা¤পাসে ছেলেদের দুইটি নতুন হল ও মেয়েদের একটি হল তৈরির কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। ছাত্রীদের শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
নিরাপদ ক্যা¤পাস প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ড. জাফর ইকবালের উপর হামলার পর আমার কাছে সকলের দাবি ছিল ক্যা¤পাসে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা।
সীমানা প্রাচীর না থাকায় অনেক বহিরাগত যে কোন সময় যে কোন স্থান দিয়ে ক্যা¤পাসে প্রবেশ করে অপকর্ম করতে পারে। তাই ঈদের পরপরই ক্যাপাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা অগ্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, জ্ঞান, দেশপ্রেম; যার মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্মের সৈনিকরা আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।” তিনি আরো বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে এবং দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে সাংবাদিকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তেমনি ক্যা¤পাস সাংবাদিকরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা তাদের মূল্যবোধ ও সাহস দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়। তাদের যৌক্তিক দাবি ওয়েজবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানোর জন্য আমি আহ্বান করব এবং তা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি মনে করি।”
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবশেনের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
উৎসবমুখর পরিবেশে সমগ্র বাংলাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা তাদের আনন্দ, বেদনা, লাঞ্ছনা-গ্লানির কথা একে অপরের সাথে শেয়ার করেন। কোন ক্যা¤পাস সাংবাদিকদের উপর রাজনৈতিক বা একাডেমিক কোন আঘাত না আসুক, সুন্দর হোক প্রত্যেকের নিজের নিজের ক্যা¤পাস- এটাই ছিল সকলের চাওয়া।