নিজাম নুর, জামালগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা চৌধুরী বাড়ির মাঠে ও হাওরে গজারিয়া বাজারে মাস ব্যাপী যাত্রাপালা ও সার্কাসের নামে অনৈসলামিক কাজ বন্ধের দাবিতে ৩৫ গ্রামের ১২৬ জন বিশিষ্ট মানুষের স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
গত রবিবার জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা’র নিকট ইসলামী সমাজ কল্যাণ সংঘ’র সভাপতি মাওঃ এখলাছুর রহমানসহ উপজেলার ৩৫টি গ্রামের ১২৬ জন স্বাক্ষরিত এ লিখিত আবেদন দেয়া হয়। জানা যায়, সাচনা চৌধুরী বাড়ির মাঠে সার্কাসের নামে অনৈসলামিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন ধরনের নৈতিকতা বিরোধী কাজের জন্য বিশাল সামীয়ানার প্যান্ডল প্রস্তুতের কাজ শুরু করছেন আয়োজকেরা। এতে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস ও অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত আনতে পারে। যুব সমাজের নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের প্রভাব, ছাত্রদের লেখাপড়ার অন্তরায়সহ মদ-জুয়ার আড্ডা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অনেক অপকর্মের সৃষ্টি হতে পারে। দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসরত এক ফসলী বোরো এলাকার কৃষকদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। অভিযোগে আরো উল্লেখ, এ সব অবৈধ কাজ বন্ধ না হলে এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠবে ও চরম উত্তেজনা সৃষ্টিসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামার প্রবল আংশকা করা হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতির দিকে যাবে আর এর জন্য আয়োজকরাই দায়ী থাকবেন বলেও অভিযোগে উল্ল্যেখ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালগঞ্জ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সভাপতি আবুল কাশেম, ও ইকবাল আল-আজাদ জামালগঞ্জ প্রতিবন্ধী সমিতিকে সহায়তার লক্ষ্যে বিনোদন মূলক সার্কাস প্রদর্শন ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর ক্রয় বিক্রয় এরজন্য মাসব্যাপী সময় চেয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে ইকবাল তার সহযোগীদের নিয়ে সাচনা চৌধুরী বাড়ির মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণ কাজ চালান দ্রুগতিতে। প্যান্ডাল নির্মাণের খবর পেয়েই এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠে সার্কাস বন্ধের দাবিতে ইউ.এন.ও’র কাছে আবেদন জানান। প্রতিবন্ধী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, অনৈসলামিক বা জোয়ার আড্ডা হলে আমাদের আর্থিক সহযোগিতার কোন প্রয়োজন নেই। আয়োজক কমিটির অন্যতম ইকবাল আল-আজাদ বলেন, আমরা প্রতিবন্ধিদের সহায়তার জন্য স্বল্প শুভেচ্ছা মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে একটা বিনোদন, শিশুদের নাগরদোলাসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রির আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছি। এর লভ্যাংশের অংশ টুকুই প্রতিবন্ধিদের প্রদান করা হবে। কোন অবৈধ বা অনৈসলামিক কাজ করার যুক্তিকতা নেই। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার নামে উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের সেলিমগঞ্জ ও গজারিয়া এলাকায় মাস ব্যাপী যাত্রা প্রদর্শনের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশকের অনুমতির জন্য আরেকটি আবেদন করেছে কিশোরগঞ্জ জেলার নরসুন্দা অপেরার মালিক আনোয়ার হোসেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাওরের কৃষকরা সংক্ষব্ধ হয়ে পড়েন। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার নামে অনুমতি চাইলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার সহ কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এ ব্যাপরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এড. আসাদ উল্লাহ্ সরকার বলেন, আমাদের এক ফসলী এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ফসল হানীর কারণে কৃষকরা দিশেহারা। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মওসুমে যাত্রাপালা হলে এলাকার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণ অসামাজিক কাজের উপার্জিত অর্থ আশা করি না। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যে সহযোগিতা করছেন তাতেই আমরা বর্তামান সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামছুল আলম তালুকদার, ভাইস চেয়ারম্যান ও চার ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যাত্রা ও মেলা বন্ধের জন্য জোর দাবী জানান।
জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে জেলা পুলিশ সুপার স্যারের একটি পত্র পেয়েছি। একই সাথে সার্কাসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের কপিও পেয়েছি। অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করে লিখিত একটি প্রতিবেদন পাঠাবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা বলেন, এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করতে জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জকে দাযীত্ব দিয়েছি। তদন্তের পর আমি জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন পাঠাবো।