কাজিরবাজার ডেস্ক :
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করা হবে।
সচিবালয়ে সোমবার ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৮’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম এসব তথ্য জানান।
সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সচিব বলেন, ‘উদ্বোধনের পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অধিবেশন শুরু হবে। এবার সম্মেলনে মোট ২২টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্যঅধিবেশন ১৮টি, এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান একটি সমাপনী অনুষ্ঠান, একটি মুক্ত আলোচনা এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে।’
২৬ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মোট ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশগ্রহণ করবে। কার্যঅধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।’
অধিবেশনগুলো হবে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে। কার্যঅধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এবার জেলা প্রশাসন সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৪৭টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, ‘এর বাইরেও জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক যদি কোনো প্রস্তাব থাকে সেটি অধিবেশনে উপস্থাপিত হতে পারে।’
‘এ বছর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রস্তাব পাওয়া গেছে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সংক্রান্ত প্রস্তাব বেশি পাওয়া গেছে।’
সচিব বলেন, ‘ডিসি সম্মেলনের মূল বিষয়গুলো হবে ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন, দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষার মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। এই বিষয়গুলো মূলত আলোচনায় স্থান পাবে।’
ডিসি সম্মেলনে ভূমি নিয়ে সমসময় বেশি প্রস্তাব আসে, তবে কি ভূমির সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না- এ বিষয়ে জিয়াউল আলম বলেন, ‘প্রতিবার ভূমি নিয়েই বেশি প্রস্তাব আসে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনের কাজ হচ্ছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন, সেটেলমেন্টও ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। এগুলো হয়ে গেলে ভূমিসংক্রান্ত মামলা কমে যাবে। তখন প্রস্তাবের সংখ্যাও কমে যেতে পারে।’
মাদকের বিষয়ে ডিসিদের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, ‘প্রস্তাব বলে এগুলো বলতে পারছি না, সিদ্ধান্ত হলে জানাব।’
নির্বাচন সামনে রেখে সম্মেলন হচ্ছে কি না- এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘প্রতি বছর সাধারণত এই সময়েই সম্মেলন হয়। এরসঙ্গে নির্বাচন কোনো মতেই সংশ্লিষ্ট নয়।’
সচিব জিয়াউল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে মাঠের যে কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকরা আছেন তারা পরিচিত হবেন। এই সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সরকারের দিকনির্দেশনা সরাসরি এখান থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যে নতুন নতুন নীতি-কৌশল বা নীতিমালা জারি হয়েছে, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা সাম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন না।’
‘এই অবহিতকরণের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে যেসব মন্ত্রণালয় বার্ষিক কর্ম-সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, সেই বার্ষিক কর্ম-সম্পাদন চুক্তির আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা ওনারা চাইতে পারেন। এর মাধ্যমে সরকারের গৃহীত সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা মনে করি।’
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দিক-নির্দেশনা গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসকরা। এটা হবে বঙ্গভবনের দরবার হলে। আগামী ২৬ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অধিবেশন।
গত বছর ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, ‘গত বছরের ডিসি সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সমন্বিত হার ৯৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।