গোয়াইনঘাটে অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত, পানিবন্দী লাখো মানুষ

73

কে.এম.লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
টানা বৃষ্টি আর পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে করে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বসত বাড়ি ও রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নতুন করে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে এর মধ্যে ১০টি বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে পানি উঠায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরর পূর্ব নির্ধারিত আজকের (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশাহিদ মিয়া জানান, বন্যার পানি বেড়ে এ পর্যন্ত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। যার ফলে ওই বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাস্তা সারীঘাট-গোয়াইনঘাট ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট তলিয়ে গিয়ে জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও জাফলং-গোয়াইনঘাট রাস্তায় পানি উঠে উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের সাথেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন করে আরও প্রায় ৩ শত হেক্টর জমির ফসল ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ দেড় হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে পানিতে নিমজ্জিত জমির ফসল ও বীজতলার পরিমাণ ১ হাজার হেক্টর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে কিছু জমির ফসল ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে এর পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, টানা কয়কে দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি আরেক দফা বেড়ে উপজেলার সর্বত্রই প্রায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে রাস্তাঘাট ও বসত বাড়িতে পানি উঠে উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গো-খাদ্যেরও দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। ফলে প্লাবিত অঞ্চলের মানুষজন তাদের গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
এদিকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে যে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তিনি বলেন বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষগুলো পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান তিনি।