সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জে থেকে :
চলতি বছরের ২ এপ্রিল স্বপ্নের দেশ ইতালিতে পাড়ি দেয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ী থেকে বের হন ২২ বছর বয়সের সাকের আহমদ। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল ২য়। উপজেলার ভাদেশ্বর আলীয়া মাদ্রাসায় আলিম পর্যন্ত পড়া লেখা করছে। ইউরোপের দেশে টেইলারি কাজে টাকা রোজগার বেশি হয়। তাই সে দু’বছর আগে টেইলারি কাজের প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়। ১বছরে টেইলারি কাজ শিখে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে চয়েজ টেইলার্স নামে একটি দোকানও খুলে। পরিপূর্ণ টেইলার্স মাস্টার হওয়ার পর বিয়ানীবাজারের এক দালালের সাথে তার পরিচয় হয়। ঐ দালাল মারফতে ইউরোপে যাওয়ার দিনক্ষণও ঠিক হয়। স্বপ্ন ছিলো ইউরোপে গিয়ে পরিবারের অর্থ যোগানদাতার তালিকায় নাম উঠাবেন, সেই স্বপ্ন পরিবারের কাছে যে দুঃস্বপ্ন হবে তা কখনই ভাবেননি ২২ বছরের টগবগে যুবক ছিলেন সাকের। গত ১৮ই জুন লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রলার ভূমধ্য সাগরে ডুবে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ শাকের আহমদ (২২) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নালিউরী গ্রামের আব্দুর রহিমের পুত্র। এ ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অপেক্ষার প্রহর গুণছে স্বজনরা। ভাইয়ের খবর পেতে হন্য হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন সিলেট এম.সি কলেজের মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র বড় ভাই মাসুদ আহমদ। মাসুদ আহমদ জানান, তার ভাই প্রায় দুই মাস পূর্বে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান, উদ্দ্যেশ্য ছিলো স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাওয়ার। গত সোমবার তারা দালালের মাধ্যমে জানতে পারেন ইউরোপের উদ্দ্যেশ্যে সাকেরদের নৌকা ছেড়ে যাবে। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছে সাকের। কোনোভাবের সন্ধান মিলছে না তার, তবে বিভিন্নভাবে তারা সাকেরের জন্য যোগাযোগ করছেন লিবিয়ায়, এখন পর্যন্ত সে জীবিত বলে তাদের ধারণা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রায় ১১৫জন যাত্রী নিয়ে একটি প্লাস্টিকের নৌকা লিবিয়া উপকুল থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রাস্তা হারিয়ে ফেলে সাগরে এলোমেলো ঘুরতে থাকে। এক সময় নৌকার ফুটো দিয়ে পানি ঢুকতে থাকলে আতংকিত হয়ে সাগরে ঝাপ দেন নৌকায় থাকা বাংলাদেশীরা। নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫জন বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বিয়ানীবাজার-বড়লেখা ও গোলাপগঞ্জের অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। সাহাদত হোসেন মুমিন নামে ইতালিতে বসবাসরত গোলাপগঞ্জ পৌরসভার এক বাসিন্দা ইতালির টিভি চ্যানেল, প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার বরাত দিয়ে বলেন, ওই ট্রলার ডুবিতে বাংলাদেশসহ সিলেটের প্রায় শতাধিক লোক রয়েছে। নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০জন ছাড়িয়ে গেছে। অনেক লোকের লাশ ভূমধ্য মহা-সাগরে ভাসছে।