গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ নিয়ে যে ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে দেশজুড়ে উত্তেজনা বেড়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের মুখ্য কাজই হচ্ছে জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করা। কিন্তু আমরা বহুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি জনগণ নয়, ক্ষমতা নিয়েই যত লড়াই দ্ব›দ্ব। কোনো রাজনৈতিক দলের থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি কাম্য নয়। গত কিছুদিন ধরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সমাবেশ -পাল্টা সমাবেশ, পদযাত্রা, শান্তি সমাবেশ করে মাঠ উত্তপ্ত করছে।
এমন সময় তারা এসব করছে যে, বাজারে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আমন ধান রোপণ নিয়ে সংকটে কৃষক, ডেঙ্গু মহামারিতে রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এসব তাদের মুখে একবারও উচ্চারিত হচ্ছে না। শুধুমাত্র ক্ষমতা-মাঠ দখল, সমাবেশের আকার বাড়ানো তাদের মূল বিষয় হয়ে উঠছে। জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণের কারণে। সেসব কোনো রাজনৈতিক দলের মাথায় নেই। তাদের কাছে এগুলো কোনো বিষয় না। বিষয় ক্ষমতা। যে কারণে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে মরিয়া বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চোখ রাঙিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না।
দেশি-বিদেশি যারাই চোখ রাঙাবেন তাদের বলে দিচ্ছি, আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। আমাদের চোখ রাঙাবেন না। গত শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শান্তি সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলার পথই বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দেবে। গত শুক্রবার ও শনিবার সমাবেশে সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে এবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে টানা ৫ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তারা একদফা দাবিতে এখনো অনড়।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবারের সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে ঘোষণা করেছেন, ভালো চাইলে এখনই পদত্যাগ করুন। একদফা মেনে নিন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। দেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি অনুধাবন করা যাচ্ছে তা দেশের জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে আমরা মনে করি না। বরং এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাড়ছে উত্তাপ। সমঝোতার সব পথ প্রায় বন্ধ। বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে। রাজনীতি গড়িয়েছে রাজপথে। মাঠ দখলের শুরু হয়েছে দুদলের শক্তির মহড়া। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখানে একদম অনুপস্থিত। বক্তৃতায় যেসব ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে জনগণ আতঙ্কিত। এই ধরনের সংস্কৃতি বর্জন করা দেশ ও দশের জন্য জরুরি। আমরা মনেকরি রাজনীতির এই পরিস্থিতি কোনোমতেই সুখকর নয়, বরং অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। জনগণের স্বার্থে যে কোনো ধরনের অস্থিরতা বন্ধ করে রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনেই দুদলের সহাবস্থান আমাদের কাম্য।