রমজানের শেষ প্রান্তে এসে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। দেশের বিপণী বিতানগুলোতে গত কয়েক দিন থেকেই লক্ষ করা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। সাধ্যমতো ঈদের বাজার সেরে নিচ্ছে ক্রেতারা। অভিজাত শপিং মলের পাশাপাশি ফুটপাতেও কেনাকাটা বেড়েছে। ক্রেতাদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, গাউন, জুতা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি হচ্ছে দোকানে দোকানে। ঈদের আগের স্বাভাবিক চিত্র ফিরে এসেছে রাজধানীসহ দেশের সব এলাকার শপিং মল ও ঈদের বাজারে। আবার এই ঈদ এলেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল টাকার কারবারিরা তৎপর হয়ে ওঠে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জাল টাকার কারবারি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও থেমে থাকে না জাল টাকার কারবার। এবার ঈদের আগেও রাজধানীতে জাল টাকার কারবারিদের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজধানীর কদমতলীর বউবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে কোটি টাকার জাল নোট, জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম, নিরাপত্তা সুতা, প্রিন্টার, ল্যাপটপ, কাগজ, কালিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ঈদ সামনে রেখে বাজারে পাঁচ কোটি টাকার জাল নোট ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। বাজারে টাকাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের আরো ৮-৯টি জাল নোট তৈরির চক্র আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
জাল টাকার ব্যবসা সারা বছর ধরেই চলে। ঈদের সময় জাল টাকার কারবারিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ঈদুল ফিতরের আগে বিভিন্ন বিপণিবিতানে ছড়িয়ে দেওয়া হয় জাল টাকা। অন্যদিকে ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর বাজারে জাল টাকার বিস্তার লক্ষ করা যায়। মূলত রাজধানী ঢাকা এই জাল টাকার কারবারিদের কেন্দ্র হলেও তাদের নেটওয়ার্ক সারা দেশে বিস্তৃত। জাল নোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ কারবারিদের ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথেও ঢুকে যায় জাল টাকা। জাল নোট ও আসল নোটের পার্থক্য সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে এর আগে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এটিএম মেশিনে টাকা ঢোকানোর আগে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনে পরীক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন শপিং মলে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন কাজে লাগানোও জরুরি।
জাল নোট প্রতিরোধ করা না গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। তাই জাল নোটের কারবারিদের রুখতে হবে। জাল নোটের কারবারিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একটি চক্র আটকের পর আরো ৮-৯টি চক্রের কথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। আমরা আশা করব, পুরো জালিয়াতচক্রকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।