কাজিরবাজার ডেস্ক :
র্যাব ও পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আট জেলায় আরো ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় তিন জন ও নীলফামারীতে দুই জন নিহত হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনা, ফেনী, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে এক জন করে মোট ১১ জন নিহত হয়েছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এ নিয়ে গত ১৯ দিনে ৩২ জন নিহত হয়েছে। আর এসব অভিযানের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া প্রতিটি ঘটনার বিবরণ প্রায় একই। তবে নিহতদের কয়েকজনের পরিবার বলেছে, তাদের স্বজনদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আগেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরো এক মাদক ব্যবসায়ী।
পুলিশের দাবি, নিহতরা জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের এক পরিদর্শকসহ চারজন আহত হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, গুলি, পাজেরো গাড়ি ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার সদর উপজেলার অরণ্যপুর বড় দিঘির পাড়ে এ বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কুমিল্লার শুভপুরের মোহাম্মদ আলী মিয়ার ছেলে পিয়ার মিয়া (২৪) এবং কুমিল্লার শুভপুরের আবদুল মান্নানের ছেলে শরিফ (২৬)।
পুলিশ জানায়, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ও কোতোয়ালি পুলিশের ওসি আবু ছালাম মিয়াসহ সঙ্গীয় ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বিকেলে শহরের শুভপুর এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী পিয়ার মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে এক শ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। পুলিশ পিয়ার মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে একটি পাজেরো জিপে করে মাদকের একটি বড় চালান ঢাকায় পাঠানো হবে।
পিয়ার মিয়ার তথ্যমতে পুলিশ অভিযান শুরু করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার সীমান্তবর্তী অরণ্যপুরের বড়পুকুরের পশ্চিমপাড়ে তল্লাশিকালে একটি পাজেরো গাড়ি দেখতে পায়। পিয়ার মিয়া তা শনাক্ত করলে পাজেরো গাড়িটি থামাতে সংকেত দেওয়া হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা গাড়ি থামিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ৫২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। মাদক ব্যবসায়ীদের গুলিতে এ সময় ঘটনাস্থলে পিয়ার আলীসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেইসঙ্গে একটি পাজেরো জিপ, একটি রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি, ৫০০ বোতল ফেনসিডিল, ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আহতদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পিয়ার আলী ও শরিফকেকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত গুলিবিদ্ধ চাঁদপুরের শাহরাস্তির আজিজ নগরের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. সেলিমকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের আহতরা হলেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক রূপ কুমার সরকার, এসআই শাহ আলম, গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই শাহীনূর ও কোতোয়ালি মডেল থানার কনেস্টবল তানভির।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, নিহত পিয়ার আলীর বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে বিরোধের জেরে একটি হত্যাসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। আর শরিফের বিরুদ্ধে রয়েছে পাঁচটি মামলা।
এদিকে জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাদ্দাম (২৬) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পায়ে গুলিবিদ্ধ সাদ্দামের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার সাদ্দাম দেবীদ্বার উপজেলার বাগুর গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে উপজেলার জাফরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, সাদ্দাম দেবীদ্বারের অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। সোমবার রাতের ওই কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দেবীদ্বার থানার এসআই মোরশেদ আলম ও পুলিশের আরো দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাদ্দামকে আটকের পর চিকিৎসার জন্য তাকে কুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ এ ছাড়া আহত পুলিশ সদস্যদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় বলে জানান তিনি।
ওসি মিজান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাত দেড়টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী সাদ্দামকে গ্রেপ্তারে উপজেলার জাফরাবাদ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে মাদক ব্যবসায়ী সাদ্দাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আমাদের থানার এসআই মোরশেদ আলম ও দুই কনস্টেবল আহত হন।’
নীলফামারী : নীলফামারীর সৈয়দপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন চার পুলিশ সদস্য। তাদের সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে শহরের উপকণ্ঠে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত মাদক ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন- শহরের ইসলামবাগের আব্দুল হান্নানের ছেলে শাহিন হোসেন (৩০) ও নিচু কলোনী এলাকার ইউসুফের ছেলে জনি আহমেদ (২৮)। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- আব্দুল ওয়াদুদ, মোকারম হোসেন, রাশেদুল ইসলাম ও আমিনুজ্জামান।
পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ইসলামবাগের শাহিন হোসেন ও নীচু কলোনীর জনি আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, মাদক ব্যবসায়ী জসিয়ার রহমান জসি ও নুর বাবুর কাছ থেকে ইয়াবা ক্রয় করে। মাদক ব্যবসায়ী জসি ও বাবু তাদের ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক সৈয়দপুর বাইপাস মহাসড়কের গোলাহাট বধ্যভূমিতে লুকিয়ে রাখে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ রাত আড়াইটার দিকে শাহিন ও জনিকে সাথে নিয়ে শহরের উল্লেখিত এলাকায় মাদক উদ্ধারে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগীরা আকস্মিক পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরাও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এই সুযোগে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালে উভয় পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয় শাহিন ও জনি। গোলাগুলির এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগিরা পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা হয় তাদের ফেলে যাওয়া ১২৩ পিস ইয়াবাসহ ৪টি দেশীয় অস্ত্র। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের কিছু দূরে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহিন ও জনিকে উদ্ধার করে স্থানীয় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে আহত ৪ পুলিশ সদস্যদেরও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান পাশা জানান, নিহতদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সৈয়দপুর থেকে মাদক নির্মূল করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আমজাদ হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত আমজাদ হোসেন নেত্রকোনা পৌর শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে।
পুলিশের দাবি, নিহত আমজাদ হোসেন খুন ও মাদকসহ ১৩ মামলার আসামি। এ সময় নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন খান, এসআই মামুন, মহসিন, মকবুল এবং কনস্টেবল আব্দুল মালেক আহত হয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হয়েছে, বন্দুকযুদ্ধ শেষে ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫০০ গ্রাম হেরোইন ও ৩০৫ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাত ৩টার দিকে নেত্রকোনা সদর উপজেলার বড়াইল বালু মহাল এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে খুন ও মাদকসহ ১৩ মামলার আসামি আমজাদকে আটক করার পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের বড়ওয়ারী এলাকা থেকে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ একটি দল হামলা করলে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।’
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নেত্রকোনা পুলিশ সুপার জয় দেব চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশকে আঘাত করে আইনি কাজে বাধা দেওয়া, আমজাদ হত্যা, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা হবে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
ফেনী : ফেনীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার রূপকানিয়া গ্রামের হাজী আব্দুল করিমের ছেলে।
সদর উপলোর লেমুয়া এলাকায় আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটে। র্যাবের দাবি, নিহত মঞ্জু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার গডফাদার।
র্যাব ৭ এর অধীন ফেনীস্থ ক্রাইম প্রিভেনশন কম্পানির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গোপনে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল মঙ্গলবার ভোরে লেমুয়া এলাকায় অভিযান চালায়। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেনিথ পেট্রল পাম্পের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়িতে তল্লাশি চালাতে থাকেন। এ সময় একটি মাইক্রোবাস দেখে র্যাব সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা গাড়িটিকে থামানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু গাড়িটি না থামিয়ে ভেতর থেকে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি চালিয়ে গাড়িকে ধাওয়া করতে থাকে। কিছু সময় পর লেমুয়া ব্রিজের পাশে নেয়াজপুর এলাকায় এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি ও পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
ফেনীস্থ ক্যাম্প অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম বলেন, ‘মঞ্জুর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও মাদক পাচারের এক ডজন মামলা রয়েছে। তিনি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক গডফাদার ছিলেন।’
দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরামপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. প্রবল হোসেন (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত প্রবল হোসেন উপজেলার দক্ষিন দামোদরপুর গ্রামের খলিল হোসেন ছেলে। আজ মঙ্গলবার ভোরে বিরামপুর পৌরসভার মনিরামপুর মাঠে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্যমতে, ভোরে বিরামপুর থানার একদল পুলিশ পৌরসভার মনিরামপুর মাঠে টহল দিচ্ছিল। এ সময় ১০-১২ জন মাদক ব্যবসায়ী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক ব্যবসায়ী মো. প্রবল হোসেন মারা যান। এ সময় বাকি মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের দুই এসআই রাম চন্দ্র ও খুরশিদ আলম আহত হন। তাদেরকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
বিরামপুর থানার ওসি আব্দুর সবুর বলেন, ‘নিহত প্রবল হোসেন একাধিক মামলার আসামি। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, পাঁচটি ককটেল এবং ৯২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাধু (৫০) নিহত হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে এসেছে।
আলমডাঙ্গা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই শফিকুল ইসলাম জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে একাধিক মাদক মামলার আসামি কামরুজ্জামান সাধু ও তার কয়েকজন সহযোগী রাতে এক বস্তা ফেনসিডিল নিয়ে স্টেশন এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশের পুকুরের কাছে ওঁৎ পেতে থাকে। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় কামরুজ্জামান সাধু। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও প্লাস্টিকের বস্তার এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করে।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত কামরুজ্জামান সাধুর লাশ ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা, নগদ টাকা ও অস্ত্র জব্দ করা হয়। নাহত শীর্ষ মাদক বিক্রেতার নাম ধন মিয়া (৩৫)। ধন মিয়া উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। আজ মঙ্গলবার ভোরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর থানায় চারটি মাদক মামলা রয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ এর এডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভোরের দিকে ধন মিয়া ও তার স্ত্রী মাদকের চালান নিয়ে সোনারামপুর এলাকা হয়ে কোথাও যাবেন-এমন খবর পেয়ে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ভোরে সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে মাদকের চালানসহ স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে ধন মিয়া সেখানে পৌঁছে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে যান। এ সময় ধন মিয়া র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করলে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ধন মিয়া। এ সময় ওই প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ১১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা, নগদ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা ও একটি পিস্তল জব্দ করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত মাদক ব্যবসায়ীর নাম বাচ্চু খান। নিহত বাচ্চু খান রাজধানী ঢাকার উত্তরার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ও বিদেশি অস্ত্র। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ের কাজে ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়িও উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে আড়াইহাজারের শিমুলতলী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করার সময় বাচ্চুসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পরে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নিহত হয় এবং বাকি দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক (এসআই) নির্মল মাদক উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।