কাজিরবাজার ডেস্ক :
একেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কাট-খড় পোড়াতে হয়। মাসের পর মাস বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারপর তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ কিংবা র্যাব। কিন্তু তাদের কারাগারে আটকে রাখা যাচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা জামিন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ভুল তথ্য দিয়ে জামিন নেওয়ার তথ্য মিলছে। অথচ জঙ্গিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার কথা শোনা যায় প্রতিদিনই। তারপরও জামিন ঠেকানো যাচ্ছে না।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি বুলবুল আহমেদ সরকার ওরফে ফুয়াদ ওরফে রকি ওরফে মেহেদী (২৬) উচ্চ আদালত থেকে ভুয়া জিম্মাদার দিয়ে জামিন নেয়। বিষয়টি পরবর্তীতে পুলিশ জানতে পারে। এরপর পুলিশের নতুন তদন্ত সংস্থা পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। এরপর আদালত বিষয়টি তদন্ত করে পিবিআই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
জঙ্গি নেতার ভুয়া জিম্মাদার দিয়ে জামিন নেওয়ার পর অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের জামিন পাওয়ার ঘটনাগুলো প্রতিটি আলাদাভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থার প্রতিটি বিভাগীয়, মেট্রো ও জেলার কর্মকর্তাদের জঙ্গিদের জামিনের বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর খোয়াজনগর এলাকার একটি জেএমবির আস্তানা থেকে জঙ্গি এই সংগঠনের সামরিক কমান্ডার জাবেদ, সেকেন্ড ইন কমান্ড ফুয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করে নগর ডিবি পুলিশ। ৬ অক্টোবর পুলিশের এক অভিযানের সময় হাটহাজারী কুয়াইশ এলাকায় ডিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জাবেদ নিহত হয়। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়। বাকি চার জেএমবি সদস্য ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল, সুজন ওরফে বাবু, মাহবুব ও সোহেল ওরফে কাজলকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর একটি মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। এরপর তিনি জানতে পারেন বুলবুল সে মামলায় ওই বছরের ১৮ অক্টোবর জামিনে রয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তার জামিনের বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি দেখতে পান, জামিনের জিম্মাদার ভুয়া। তার জামিনামায় থাকা দুই জিম্মাদারই ভুয়া। ওই ঠিকানায় এমন কোনও ব্যক্তি থাকেন না। ওই জঙ্গির জামিনদার হন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার তুলসীপাড়ার জালাল, আর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগরের জামাল। জঙ্গি বুলবুলের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তুলিসী পাড়া বড়বাড়ি এলাকায়। ওই ঠিকানায় পিবিআই তাদের কাউকে পায়নি।
জামিন নেওয়া জঙ্গি বুলবুলের পরিবার খুবই দরিদ্র। উচ্চ আদালতে এসে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মতোও তার পরিবারের কেউ নেই। কিন্তু তারপরও তার মামলার নিয়মিত দেখভাল করা হয়। এসব নিয়েই পিবিআইর সন্দেহ হয়। তাহলে কি জঙ্গিদের মামলা সাংগঠনিকভাবে পরিচালিত হয়?
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ‘জামিনদারদের ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। জামিনদার ভুয়া দেওয়া হয়েছে। আমি আদালতের নির্দেশে বিষয়টি এখনও তদন্ত করছি।’
তিনি বলেন,‘জামাল অথবা জালাল লেখা জামিননামায়। স্বাক্ষরও একই ব্যক্তির। কিন্তু তাদের ঠিকানা ভিন্ন। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর তাই তদন্ত করছি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পিবিআই ভুয়া জামিনদারের বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছে। শুনানি শেষে আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
এই ঘটনা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় জামিন পেয়েছে আদালত থেকে। মুক্তি পাওয়া এসব জঙ্গির অনেকেই এখন উধাও। যদিও তাদের সবার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা রয়েছে। তাদের পুনরায় গ্রেফতারের চেষ্টাও করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আনসার আল ইসলাম, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, নব্য জেএমবিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত আরও কিছু জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ জঙ্গিনেতা ও কর্মীরা জামিন পেয়েছে। তাদের জামিনের বিষয়গুলো আলাদা আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখছে পিবিআই।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘চট্টগ্রামের জঙ্গি নেতার দুই জামিনদারের বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। পাশাপাশি অন্যান্য জঙ্গিদের জামিনের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’