স্টাফ রিপোর্টার :
ভূয়া বাবা-মা সেজে ৩ সন্তানের জন্য পাসপোর্ট আবেদনের দায়ে এক ইউপি সদস্যসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় নিয়মিত (নং-১০) এ মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ফাতেহা বেগম উরফে ফাহিমা নামের এক মহিলাকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: মাহবুবুল আলম।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সিলেট হতে বিয়ানীবাজার থানার ছোটদেশ গ্রামের ফয়ছল আহমদের পুত্র আশরাফ আহমদ (১২) তার ভাই সুহেল আহমদ (১৪) এবং রেদওয়ান আহমদদের (১০) নামে মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করার জন্য আবেদন করা হলে আবেদনকারীদের নাম-ঠিকানাসহ অন্যান্য বিষয়াবলি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য জেলা বিশেষ শাখা, সিলেটে প্রেরণ করা হয়। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, উক্ত ৩ আবেদনকারীর সবাই শিশু এবং তারা কেউই বর্ণিত পিতা-মাতা ফয়ছল আহমদ এবং ফাতিহা বেগম উরফে ফাহিমাদের সন্তান নয়। আরো জানা যায় যে, পাসপোর্ট করার নিমিত্ত উক্ত ৩ শিশুর নামে তথ্য গোপন করে স্থানীয় উইপি সদস্যের সুপারিশে কথিত পিতা ফয়সল আহমদ ১০ নং মুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেন। সেই জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতেও ৩ শিশুর নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করে। পাসপোর্টের আবেদনে শনাক্তকারী হিসাবে যে ব্যক্তির নাম, স্বাক্ষর এবং সীল ব্যবহার করা হয়েছে সেই ব্যক্তির কোন অস্তিত্বই নাই অর্থাৎ, অন্যের নামে সীলটি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে এবং ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী অফিসার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখার মোঃ মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করার নির্দেশ প্রদান করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্রাজিল প্রবাসী ফয়সল আহমদ এর সাথে ফাতেহা বেগম উরফে ফাহিমা এর বিয়ে হয় এবং নিকাহনামা সম্পন্ন হয়। ফাতিহা জানান যে, তার স্বামী ফয়সল আহমদ ব্রাজিল হতে দেশে ফেরৎ আসার পর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্র“য়ারী তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেন। ফয়সল আহমদ ছুটি শেষ করে ব্রাজিল ফেরত যান। তাদের ঘরে ৮/১০ মাসের একটি পুত্র সন্তান হয়ে মারা যায়। এছাড়া তাদের আর কোন সন্তান নেই। উক্ত ৩ শিশুকে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজেদের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়ে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। আরো জানা যায় যে, শিশু তিনটিই ফয়সলের নিকটাত্মীয়। অনুসন্ধানের শেষ দিকে শিশু তিনটির আসল পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। তাদের প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে- বিয়ানীবাজার থানার দুধবকসী মাথিউরা গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের পুত্র আশরাফ আহমদ, একই থানার শেওলা দিগলবাগ গ্রামের দুবাই প্রবাসী আজিজ উদ্দিনের পুত্র সুহেল আহমদ এবং বড়লেখা থানার নিজবাহাদুরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী ময়জ উদ্দিনের পুত্র রেদওয়ান আহমদ।
উল্লেখিত ফয়সল আহমদ, স্ত্রী ফাতেহা বেগম উরফে ফাহিমা ও ইউপি সদস্য মো: নাজিম উদ্দিন এবং অজ্ঞাতদের পরস্পর যোগসাজসে জেনেশুনে, স্বজ্ঞানে এবং সুকৌশলে অন্যের সন্তানদেরকে নিজেদের সন্তান পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশে নেয়ার/পাচারের জন্য ইউপি সদস্য এর সুপারিশক্রমে মিথ্যা জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ সৃজন, নকল সীল তৈরীসহ অস্তিত্বহীন ব্যক্তির দস্তখত দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় পেনাল কোড এর অপরাধে তাদের ৩ জনের বিরুদ্ধে উক্ত মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।