মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
দেশের দ্বিতীয় শ্রীমঙ্গলে আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রে প্রথম দিনেই প্রায় ১২ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছে।
অকশনে প্রথমেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এমএম ইস্পাহানির ১ কেজি চা ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গোল্ডেন ব্রোকেন ওনেন্স পিকো বা জিবিওপি নামে বিশেষ প্রকারের এই চা প্রতি কেজির নিলাম-বাজার মূল্য ছিল ২২০ টাকা।
অকশন সেন্টারে চা নিলামে সজ্জিত করে রাখা বিভিন্ন গ্রেডের চা সর্বপ্রথম নিলাম ডাকে ওঠে ইস্পাহানির এই জিপিওপি গ্রেডের চা। বিট (দর হাঁকানো) করে এই চায়ের দাম এক লাফে পৌঁছে যায় কেজি প্রতি ১০ হাজারে। সঙ্গে সঙ্গে এমএম ইস্পাহানি কোম্পানির সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানি হাত উঁচু করে ১১ হাজার টাকা দর হাঁকেন। এই মূল্যের উপর আর কোনো বায়ার ডাক না দেওয়ায় কেজি প্রতি ১১ হাজারে কিনে নেয় এমএম ইস্পাহানি।
এ ব্যাপারে ইস্পাহানি কোম্পানির শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম রেজা বলেন, অকশন হাউজের প্রথম অকশনে প্রথম ডাকটি হলো আমাদের কোম্পানির জিবিওপি গ্রেডের এই চা। চায়ের স্মৃতি হয়ে থাকতেই মূলত আমাদের সভাপতি এই দামে চা ক্রয় করেন। ইস্পাহানির গোল্ডেন ব্রোকেন ওনেন্স পিকো বা জিবিওপি গ্রেডের এই চায়ের ফ্লেভার (ঘ্রাণ) এবং টেস্টে (স্বাদ) দু’টিই চমৎকার। এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেটবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত চা নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আর মুস্তাহিদুর রহমান পিএসসি নিলামডাকের উদ্বোধন করেন। এ সময় এমএম ইস্পাহানি চা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মির্জা সালমান ইস্পাহানি, ফিনলে টি’র চীফ অপারেটিং অফিসার এএম শামসুল মহিত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টি প্ল্যান্টার অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) উদ্যোগে এ কার্যক্রম চলছে। দুপুর ১ টা নাগাদ পৌনে ৫ লক্ষ কেজি চা পাতা প্রায় ১২ কোটি টাকায় বিক্রি হয়।
চা নিলাম কার্যক্রমে ন্যাশনাল ব্রোকার্স, পূর্ববাংলা ব্রোকার্স, কেএস ব্রোকার্স, প্রোডিউস ব্রোকার্স, প্রোগ্রেসিভ ব্রোকার্স, ইউনিটি ব্রোকার্স এবং প্লান্টার ব্রোকার্স অংশ নেয়।
সোমবার দুপুর ২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তর থেকে শ্রীমঙ্গল নিলাম কার্যক্রমের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী। শ্রীমঙ্গল চা নিলামকেন্দ্রে কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশের চা শিল্পের অগ্রগতিতে এ নিলামকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত: ১৮৪৯ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে চা উৎপাদনের শুরু হয়। বর্তমানে সিলেট জেলায় ২০টি, মৌলভীবাজারে ৯৩টি এবং হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি চা বাগান রয়েছে। দেশের সিংহভাগ চা উৎপাদনে সিলেট অঞ্চলের একক আধিপত্য থাকলেও পণ্যটির আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রে অবস্থান চট্রগ্রামে। সিলেট থেকে উৎপাদিত চা চট্রগ্রাম নিয়ে এরপর তা নিলামে তোলেন চা সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে মান কমার পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় যুক্ত হওয়ায় চায়ের দাম বেড়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন থেকে মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে চায়ের নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিল চা সংশ্লিষ্টদের। অবশেষে তার প্রতিফলন ঘটেছে।