সুনামগঞ্জে জীপের ধাক্কায় ছাত্রলীগ নেতা নিহত

29

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মল্লিকপুরস্থ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও জেলা এলজিইডি অফিসের পাশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের লাল পাজারো জীপের ধাক্কায় এক মোটর সাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তার নাম রুহুল আমিন হৃদয় (২২)। সে শহরের হাছননগরস্থ মরাটিলা ময়নারপয়েন্ট আবাসিক এলাকার বিদ্যুৎ কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ শাহজামাল মিয়ার ছেলে ও সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের বিএ ২য় বর্ষের ছাত্র। এছাড়াও সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সভা সমিতিতে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে একটি যাত্রীবাহি লেগুনা গাড়ী সুনামগঞ্জ থেকে মদনপুর যাওয়ার প্রাক্কালে এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের লাল পাজারো জীপ গাড়ী শহরের দিকে যাওয়ার সময়ে মল্লিকপুরস্থ বিজিবি ক্যাম্পের নিকটে জেলা এলজিইডি অফিসের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেলটি রাস্তার পাশে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সাইকেলের আরোহী সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রুহুল আমিন হৃদয় (২৭)। খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সফিউল এর নেতৃত্বে শহরের টহলরত পুলিশদল ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। তবে পাজারো জীপ কিংবা লেগুনা চালককে আটক করতে পারেনি পুলিশ। সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শহীদুল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,আমরা ঘটনাস্থলে থাকা সিসি টিভির ফুটেজএ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাজারো জীপ গাড়ীটি দেখতে পাই। কিন্তু ঘটনার পর ঐ পাজারো জীপ গাড়িটি গ্যারেজে তালাবদ্ধ করে রাখায় এবং গাড়ীর চালক রহস্যজনকভাবে আড়াল হওয়ায় আমরা আসল রহস্য এখন পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারিনি। তবে পুলিশ চালককে আটক করার চেষ্টা করছে বলে জানান ওসি। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল নাসির উদ্দিন আহমদ পিএসসি বলেন, এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে আমি জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দিয়ে দুর্ঘটনার স্থানে একটি স্পীডবেকার স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমাকে হাইকোর্ট দেখালেন। তারা এখন পর্যন্ত ঐ এলাকায় স্পীডবেকার স্থাপন করেননি। ফলে দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, ঐ এলাকায় র‌্যাব বিজিবি এলজিইডির অফিস রয়েছে। প্রায়ই বড় বড় যানবাহন চলাফেরা করে এ রাস্তা দিয়ে। বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রে যানজটের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এলজিইডির সামনে স্পীডবেকার স্থাপন অত্যন্ত জরুরী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, রুহুল আমিন হৃদয় (২২) এর খুনী ঘাতক চালককে আটকের দাবীতে শহরে সুশীল সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। অন্যদিকে বাদ এশা শহরের কেন্দ্রীয় টাউন জামে মসজিদে নামাজে জানাযার পর শহরের আবাসিক এলাকাধীন কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রুহুল আমিন হৃদয়ের লাশ দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নিহত হৃদয়ের চাচা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইকবাল হোসেন ও কারিমুল ইসলাম মিন্টু বলেন,আমাদের ভাতিজা হোন্ডা নিয়ে রাস্তার পাশের্^ দাড়িয়েছিল। ঐসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাজারো জীপ গাড়ি দ্রুতবেগে চালিয়ে চালক শহরের দিকে যাচ্ছিলো। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে ঐ চালক তার পাজারো জীপ দ্বারা আমার ভাতিজাকে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশের্^ ফেলে দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাড়ীতে থাকায় গাড়ি থেকে নেমে অন্য একটি অটোরিক্সা দ্বারা আমার ভাতিজাকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রদীপ সিংহ বলেন, আমার গাড়ী এ দুর্ঘটনা ঘটায়নি। ঘটনার সময় আমি আমার গাড়ীতে শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় হৃদয়কে পড়ে থাকতে দেখে আমি নিজে তাকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা সদর হাসপাতালে যাই। এ ঘটনাটি নিয়ে নিহতের পরিবার ছাড়াও শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার দৌহিত্র রুহুল আমিন হৃদয় কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালিয়ে গাড়ী দ্বারা ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে খুন করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল, সাধারণ সম্পাদক ছাদিয়া বখত সুরভী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক আরিফ উল আলমসহ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।