মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। যদিও নির্বাচনের দাবিতে অনেক আন্দোলন করেছেন ভূক্তভোগী দুই ইউনিয়নবাসী।
জানা গেছে, সর্ব শেষ ২০০৩ সালে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আকমল হোসেন। ২০০৫ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ইউপি সদস্য নছির মিয়া। পরে মিরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্যগণের ভোটে ৭নং ওয়ার্ডের আরেক ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে ২০০৮ সালে মিরপুর ইউনিয়নের একাংশ ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের আরেকাংশ লহরী গ্রামের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে লহরী গ্রামের মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না। যে কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন এ দুই ইউনিয়নবাসী।
এদিকে মিরপুর ইউনিয়নের নির্বাচন না হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জমির উদ্দিন ও পুরনো ইউপি সদস্যগণ। এর মধ্যে ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হারুন মিয়া ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরশ আলী স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বয়োবৃদ্ধ আবদুস সোবহান বর্তমানে প্যারলাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী রয়েছেন। বাকি ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল কাদির, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন, ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফা মিয়া, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মালিক, ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নছির মিয়া, ১, ২, ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য আফিয়া বেগম, ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের আকজান বিবি ও ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের রাজিয়া বেগম দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ব্যাপারে ২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার মিরপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জমির উদ্দিন বলেন, আমিও চাই নির্বাচন হোক। নির্বাচন হলে জনপ্রতিনিধিদের কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের নির্বাচন হচ্ছে না। মামলা কোন অবস্থায় আছে আমি জানিনা। কবে নির্বাচন হবে তাও বলতে পারব না। তবে যদি নির্বাচন হয় এবং আমি দলীয় প্রতীক নৌকা পাই তাহলে আগামি নির্বাচনে অংশ নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কদমতলী-কচুরকান্দি রাস্তায় ৩টি ব্রিজ নির্মাণ, রতিয়ারপাড়া-আধুয়া রাস্তা নির্মাণ, এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০টি ছোট রাস্তা সহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে মাটি ভরাট করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি নির্বাচন হয় এবং আমি চেয়ারম্যান পদে অংশ নেই তাহলে জনগণ অবশ্যই আমাকে মুল্যায়ন করবেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মিপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে, এসব মামলা থেকে বের হয়ে এ দুই ইউনিয়নে নির্বাচন দিতে। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন হবে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলেই নির্বাচনের তপশীল ঘোষণা করা হবে। তা না হলে এভাবেই চলবে।