৭৭ বছরেও লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া ॥ ছাতকের সিংগেরকাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন বঞ্চিত

64

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের সিংগেরকাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭৭ বছরেও লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। টিনশেডের জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনটি দেখতে অনেকটা পরিত্যক্ত বাড়ির মত। ৫ কক্ষ বিশিষ্ট এ ভবনের কোন দরজা-জানালা নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন রকম সংস্কার কাজ না হওয়ায় ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয় চলাকালিন সময় ছাড়া দরজা-জানালাবিহীন এ ভবনটি সর্বক্ষণই অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। ফলে অরক্ষিত ভবনটি রাতের আঁধারে অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৯৭ সালে ৪দলীয় জোট সরকারের সময় তৎকালিন সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরাতন টিনশেডের ভবনটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ক্রমেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে পুরাতন ভবনের একটি কক্ষ সংস্কার করা হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। বর্তমানে এ কক্ষটিতে শিশু শ্রেণীর পাঠদান করা হয়। জরাজীর্ণ এ ভবনটিতে  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে লেখাপড়া করে আসছে। বিদ্যালয়টি নোয়ারাই-নরসিংপুর সড়কের পাশে নজরকাড়া স্থানে হওয়া স্বত্ত্বেও বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসছে না। বিদ্যালয়ের টিনশেড এ ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। টিনের চালা, চটি-বর্গা ও বাঁশের তৈরী ছাদ ঝুলে রয়েছে। যেকোন সময় খসে পড়ে ঘটতে পাড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা। পুরাতন ভবনের ৪টি কক্ষই ভাঙ্গা-চুরা ও বালি বিছানো মেঝে। শিক্ষার্থীদের দৌড়াদৌড়িতে ধূলিময় হয়ে উঠে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা। সংস্কারকৃত কক্ষে শিশু শ্রেণীর পাঠদান চলছে নোংরা পরিবেশে। টিনশেডের ভবনের দেয়াল ও পিলার আস্তর খসে পড়ছে অনবরত। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি চৈত্র-বৈশাখের ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করছেন অভিভাবকরা। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপীঠ ৭৭ বছর ধরে সিংগেরকাছ সহ আশপাশের ৮-১০ গ্রামের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে গৌরবের সাথে। নোযারাই ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেয়া অবহেলিত এ বিদ্যাপীঠ নিজেই আলোকিত হতে পারছে না। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জীর্ণতা নিয়ে শিক্ষা দানের মহৎ পথচলা অব্যাহত রাখলেও সরকারি এ বিদ্যালয়ে আধুনিকতার এতটুকু ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে ৪শ’৪৫ জন শিক্ষর্থীর জায়গা সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ছাত্রছাত্রীদের বসার ডেস্ক, বেঞ্চসহ আসবাবপত্রের সংকটের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় ঘটছে চরম ব্যাঘাত। গাঁদা-গাঁদি করে বসে পাঠ গ্রহণ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অস্বস্তিকর পরিবেশে পাঠ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে বলে অভিভাবক মহল মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে এখানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্তর অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনায়েম খান জানান, ২০০২ সাল থেকে তিনি এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমান সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়নে কাজ করলেও এ বিদ্যাপীঠ এ সুযোগ-সুবিধা থেকে রয়েছে বঞ্চিত। বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত ভূমি থাকা সত্ত্বেও ভবনের কারনে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ও এমপি মহোদয়কে অবহিত করলেও সিংগেরকাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাগ্যে বিধিবাম। তিনি ৫কক্ষ বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন ও সীমানা প্রাচীর এবং প্রয়োজনীয় বেঞ্চ-ডেস্কসহ আসবাবপত্র প্রদানের জন্য স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।