গাজীপুরে প্রার্থীর প্রত্যাহারের শর্তে ॥ সিলেট সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট থেকে মেয়র পদ চায় জামায়াত

99

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জোটের চেয়ে দলীয় স্বার্থের বিষয়ে এখন বেশি মনোযোগী ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী। আর এ কারণেই খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে জোটের প্রধান দল বিএনপির কাছে নানা শর্তের বেড়াজাল তৈরি করছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকা দলটি। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সংগঠনটির সমর্থিত প্রার্থী এস এম সানাউল্লাহ’র মনোনয়ন প্রত্যাহার করার শর্তে বিএনপির কাছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটগত সমর্থন চায় জামায়াত। পাশাপাশি খুলনায় দলীয় ৫টি ও গাজীপুরে ৬টি কাউন্সিলর পদে জোটগত মনোনয়ন চায় তারা। দলটির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচন করা সিদ্ধান্ত থাকলেও কোন দল থেকে প্রার্থী হবে—এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এ কারণেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের মাত্র দু’দিন আগেও গাজীপুরে দলটির সিটি আমির এস এম সানাউল্লাহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলটির নেতারা মনে করেন, জোটবদ্ধতার দায়িত্ব কেবল শরিকদলগুলোর নয়। এর দায়িত্ব কিছু বিএনপিরও আছে। যদিও প্রধান দল বিএনপি বলছে,আলোচনা চলছে এবং রবিবারের আগেই জামায়াতের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে আশাবাদী দলটি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার শুক্রবার রাতে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী থাকবে না কেন, আমরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি তো নির্বাচন করার জন্য।’
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জোটের দায়-দায়িত্ব কী শুধু শরিকদলগুলোর, যারা জোটের বড় দল তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন এস এম সানাউল্লাহ। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামী’র নিবন্ধন না থাকায় তিনি গাজীপুর উন্নয়ন পরিষদের ব্যানারে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এস এম সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও কোনও সমঝোতা হয়নি। দল থেকে যা বলা হবে, আমি তাই মেনে নেবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, প্রত্যাহার করবে। কারণ, ২০ দলীয় জোটে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপির প্রার্থী থাকবে। আলোচনা চলছে।’
জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, ইতোমধ্যে দেশের সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে জামায়াত। এর মধ্যে ৩৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ১২৬টিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর মেয়র ও কাউন্সিলর ও খুলনায় শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশের ১১টি সিটির মধ্যে জামায়াতকে অন্তত সিলেট সিটিতে নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে জোটগতভাবে। সিলেটে প্রার্থিতা করার সুযোগ দিলেই গাজীপুরে ছাড় দেবে জামায়াত। আর এই দরকষাকষি করতে গিয়েই জোটের একক প্রার্থী নির্ধারণ প্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় জামায়াত।
বিএনপি-জোটের সূত্রগুলো বলছে,ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র প্রার্থী দেওয়ার পর জোটে আলোচনার পর তা প্রত্যাহার করে নেয় জামায়াত। কিন্তু গাজীপুর সিটি নিয়ে এখনও জোটে আলোচনাই হয়নি। বৃহস্পতিবার আধাঘণ্টার বৈঠকেও দলটির কোনও প্রতিনিধি অংশ নেয়নি।
অংশ না নেওয়ার কারণে সম্পর্কে জোটের একটি ইসলামী দলের মহাসচিব বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, আমরা ধারণা করছি, জামায়াত সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে চায়। এর মধ্যে সিলেটে ও রাজশাহীতে তাদের অবস্থান ভালো। সে কারণে গাজীপুর সিটিতে দর কষাকষি করতেই প্রার্থী দিয়ে রেখেছে জামায়াত। এই নেতার ভাষ্য, তারা মনে করে, সিটি নির্বাচনে তারা বিজয়ী হতে পারবে, বিশেষ করে সিলেটে। আর এ কারণে অন্তত একটি সিটিতে বিএনপির কাছ থেকে ছাড় চায় জামায়াত।
এ বিষয়ে এ সমীকরণ সম্পর্কে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অনেক কথাই বাজারে আছে। তার কিছু সত্য, কিছু গুঞ্জন।’
বিএনপি-জোটের একনেতা কাছে সংশয় প্রকাশ করেন জামায়াত নিয়ে। তার মন্তব্য,‘গত এক মাসে জামায়াতের নেতারা একে-একে বেরিয়ে এসেছেন জেল থেকে। প্রকাশ্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। সেদিক থেকে বিএনপির ওপর শর্ত বা চাপ প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
২০ দলীয় জোটের গাজীপুর সিটি নির্বাচন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আলোচনার চেষ্টা চলছে। আমি আশাবাদী আগামীকালের মধ্যেই একটি সুরাহা হবে। জামায়াত প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বিএনপিকে সমর্থন দেবেন।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এটা তো খুবই যৌক্তিক যে আমরা বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় যাবো, যেহেতু আমরা জোটে আছি। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সবকিছু ফাইনাল হবে।’