দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে দিতে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী যাত্রী ও পণ্যবাহী ৫২ হাজার ৬৭০টি গাড়ির চলতি মাসের মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা না করালে সেগুলোর অস্তিত্ব তালিকা থেকে মুছে ফেলবে তারা। ফিটনেস সনদবিহীন এসব গাড়ি যাতে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে, সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও নির্দেশনা দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের প্রাণহানি ঘটছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকরা যেমন এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তেমনি দায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহন। সারা দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চলাচলের অনুপযোগী এসব গাড়ি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির তালিকায় আছে যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস ও পণ্যবাহী যানবাহন। রাজধানী সহ সারা দেশে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ৮৮ শতাংশই ফিটনেসবিহীন। এসব যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। লক্কড়ঝক্কড় মার্কা অনেক গাড়িই রাজধানীর পথে চলাচল করছে, যেগুলোর আয়ু শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এসব গাড়ির লুকিং গ্লাস নেই। আসনগুলোও বসার অনুপযুক্ত। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সংঘটিত দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬০ হাজার ৬৬১টি গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য সব যানবাহনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা করিয়ে সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০০১ সালে গাড়ির ফিটনেস নেওয়ার পর অনেক মালিকই নতুন করে ফিটনেস সনদ নেননি। অর্থাৎ গাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করেছেন তাঁরা। ফিটনেস সনদহীন গাড়ির তালিকায় সরকারি গাড়ির সংখ্যাও একেবারে কম নয়। সরকারি সংস্থাগুলো তাদের যানবাহনের ক্ষেত্রে কিভাবে আইন অমান্য করে? অন্যদিকে বিআরটিএ এত বছর এ বিষয়ে কেন নীরব ছিল, তা-ও অজানা। এবার বিআরটিএ যেন সিদ্ধান্তে অটল থাকে। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। ফিটনেস সনদহীন সব ধরনের যানবাহন রাস্তা থেকে তুলে দিতে হবে। সরকারি গাড়ির ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। নির্ধারিত সময়ের পর কঠোর অভিযান চালাতে হবে। ফিটনেস সনদহীন গাড়ি রাস্তা থেকে তুলে দেওয়া গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।