কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দশম সংসদ ভেঙে দেওয়া বা বহাল রাখা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি করে আসছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দল মনে করে, এই দাবি মেনে নেওয়া হলে সেটা হবে বিএনপির কাছে তাদের পরাজয়। আবার সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে নতুন যেসব প্রার্থী দলের মনোনয়ন পাবেন, প্রচারণায় তাদের জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আর সংসদ ভেঙে দেওয়া না হলে দশম সংসদে নির্বাচিত এমপিরা যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন, তারা মনোনয়ন পাওয়া নতুন প্রার্থীদের পরাজিত করতে উঠে পড়ে লাগবেন। ফলে সংসদ ভাঙা কিংবা বহাল রাখা নিয়ে আওয়ামী লীগ উভয় সংকটে রয়েছে।
দলটির অন্তত এক ডজন নেতা এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা জানালেও এখনই তারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতারা জানিয়েছেন, সংসদ রেখে নির্বাচন না করাই ভালো হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন নেতা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা দলীয় ফোরামে কথা বলবেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গুরুত্ব সহকারে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপির একটি দাবি পূরণ হবে। এতে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন। নির্বাচনি মাঠে বিএনপি তখন ফুরফুরে মেজাজে থাকবে। আর সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে গেলে এখনকার এমপিদের দাপটে নতুন প্রার্থীরা চাপের মুখে থাকবেন। মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষোভে পুরনোরা নতুন প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া বর্তমান সংসদের এমপিরা পরবর্তী সংসদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের বাড়তি সুবিধা পাবেন, যা নতুন করে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা পাবেন না। এ ক্ষেত্রেও নতুন প্রার্থীরা জটিলতায়ও পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে অন্তত অর্ধেক প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। নতুন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আবার বড় কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি, তরিকত ফেডারেশন, বিএনএফ’র এমপি রয়েছেন। এছাড়া আছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। এসব দল ও স্বতন্ত্র মিলে দশম সংসদে আওয়ামী লীগের বাইরে ৭১ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। জোট ছাড়া নির্বাচন হলে এই আসনগুলোতে ওইসব দলের এমপিরা আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থীদের নির্বাচনি মাঠে দাঁড়াতেই দেবেন না। এসব বিবেচনায় সংসদ রেখে নির্বাচন হলে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হবে আওয়ামী লীগের নতুন মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে বর্তমান সংসদের এমপিদের মধ্যে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন, তারা নতুন মনোনয়ন পাওয়া কাউকেই বিজয়ী হতে দেবেন না। সেসব এলাকায় ওই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি হবে আরও দুই জন। একজন বর্তমান সংসদের এমপি, আরেক জন হবেন বিএনপির। ফলে নিজ দল ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের মোকাবিলা করে দলের নতুন প্রার্থীর পক্ষে বিজয়ী হয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে। সংসদ রেখে নির্বাচন হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হবে এবং আওয়ামী লীগই বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবে।
তবে বিপাকে পড়া পরিস্থিতি সামলে নিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিকল্প একটি চিন্তা মাথায় রেখেছেন বলে জানা গেছে। তা হলো, তফসিল ঘোষণার পর যাচাই-বাছাই ও প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে গেলে, সংসদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে বিপাকে পড়তে হবে না আওয়ামী লীগকে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে যেকোনও সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন, সংসদ রেখে না ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হবে, এনিয়ে আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। আইনি প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক কৌশল সব হিসাব-নিকাশ করে দলের জন্যে যেটা ভালো হবে, সেটাই করবে আওয়ামী লীগ।