পুলিশী নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হচ্ছে বুধবারের মধ্যে

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে যুবক রায়হান আহমদ হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী বুধবারের মধ্যে যে কোন দিন এই চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান।
চার্জশিটে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে চার্জশিটে আর কাদেরকে আসামী করা হচ্ছে এ ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় পিবিআই। চার্জশিট দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামীদের ব্যাপারে অবগত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান।
সূত্র জানায়, রায়হান আহমদ হত্যা মামলার তদন্তের সময় বর্ধিত করার জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করে পিবিআই। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানীর পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করেন। এরপর তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পিবিআই কর্মকর্তারা রায়হান হত্যা মামলার আদ্যোপ্রান্ত পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেন। সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। এখন আইনী কোন ফাঁকফোকড় রয়ে গেছে কি-না তা খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী বুধবারের মধ্যে যে কোন দিন আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অভিযুক্ত ৬ জন এখন কারান্তরিণ রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। চার্জশিটে এই ৬ জনকে আসামী করা হবে কি-না তা স্পষ্ট করেননি পিবিআইর এসপি খালেদ উজ জামান। রায়হান হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে আসামী করা হবে কি-না এ বিষয়টিও এখনো পরিস্কার নয়।
পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে তাদেরকে আসামী করা হবে। চার্জশিট প্রস্তুত জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, নগরীর আখালিয়ার নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে গত বছরের ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। এরপর টাকার দাবিতে তাকের রাতভর ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করেন।