স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মুক্তমঞ্চে ইইই বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় লেখক ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি ও প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার সকাল ১১টায় শাবিপ্রবির উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহ্বানে এ কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।
পরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এদিকে শিক্ষকদের পাশাপাশি সকাল থেকেই দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী জাফর ইকবালের উপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সমাবেশ থেকে কয়েকটি দাবী উত্থাপন করেছেন। তারা জানিয়েছেন তাদের দাবী পূরণ হওয়া না পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তাদের দাবীগুলো হল- জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্যসমুহ প্রকাশ করতে হবে, এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দ্রুততম সময়ের ভিতরে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনকারীরা আরো দাবী জানান, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে- ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, দ্রুততম সময়ে ক্যাম্পাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে, নিরাপত্তা ইস্যু সুষ্ঠু সমাধানের নামে হয়রানিমূলক নিয়মনীতি প্রণয়ন না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও তাদের দাবী সমূহের মধ্যে ছিল- ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দিনব্যাপী এ প্রতিবাদে শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আলোক মিছিল, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, মৌন মিছিল, অবস্থান কর্মসূচী, পথ নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। সোমবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন থেকে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করে সিএসই ও ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন তারা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুপুর একটা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। পাশাপাশি আমরা অবস্থান কর্মসূচিও পালন করছি।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, এ ধরনের হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত পেছনের কারিগরদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করছি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি সৈয়দ হাসানুজ্জামান বলেন, এই হামলা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। এ ধরনের হামলা মুক্তচিন্তা চর্চা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত। আমরা এ ঘটনার মূল হোতাদের বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইইই ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠান চলার সময়ে জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে ফয়জুর রহমান। এ সময় তার মাথায় ছুরিকাঘাত করে হামলাকারী। ঘটনার পর পরই ফয়জুর রহমানকে শিক্ষার্থীরা আটক করে গণপিটুনী দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। ঘটনার পর জাফর ইকবালকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে আটক ফয়জুরকে পুলিশী পাহারায় ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আটক হওয়া ফয়জুলের মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ: প্রযুক্তির সহায়তায় নগরীর জালালাবাদ থানার মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে শাবিপ্রবি শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর হাসান উরফে ফয়জুল উরফে শফিকুরের মা ও বাবা আটক করেছে। তাদেরকে পুলিশের অভিযানকারী দল নিজেদের জিম্মায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে অভিযানে সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান জানতে পেরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান- আটকদের মধ্যে রয়েছে ফয়জুলের বাবা মাদরাসা শিক্ষক হাফিজ আতিকুর রহমান ও তার মা মিনারা বেগম। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফয়জুল সম্পর্কে কিছু তথ্যও তারা পুলিশকে দিয়েছেন।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আব্দুল ওয়াহাব জানান- পুলিশের একটি দল নগরী থেকে ফয়জুলের বাবা ও মা’কে আটক করেছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।