কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাগারে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন তার ভাই-বোনসহ ৪ স্বজন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার সহধর্মিণী কানিজ ফাতেমা ও ছেলে অভিক এস্কান্দার এবং খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম কারাগারে প্রবেশ করেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কারাগারে স্বজনদের প্রবেশ করানো হয়। এর পর বিকেল ৫ টার দিকে তারা বের হয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। তবে এই সময় কারাগারের সামনে অপেক্ষায় থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি। এর আগে বেলা ৩ টার দিকে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চান। অনুমতি পাওয়ার পর তারা কারাগারে প্রবেশ করেন। এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে ওই ৪ জন সাবজেলে প্রবেশ করেন।
খালেদা জিয়ার স্বজনদের বাসা থেকে কারাফটকে নিয়ে আসেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল। তিনি জানান, স্বজনদের সঙ্গে ৫৫ মিনিট কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তবে বেরিয়ে আসার পর গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি স্বজনরা। হেলাল জানান, কারা কর্তৃপক্ষের কারণে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি তারা। জানান, স্বজনদের বিএনপির চেয়ারপারসন জানিয়েছেন তিনি ভালো আছেন ও সুস্থ আছেন। এই বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্র“য়ারি) বিকাল সোয়া তিনটায় কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয় তাকে। বর্তমানে একজন নারী ও একজন পুরুষ ডেপুটি জেলার ও কয়েকজন নারী কারারক্ষী এই ‘সাবজেলে’ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, বাইরে রয়েছেন আরও শতাধিক কারারক্ষী। তারা সবাই খালেদা জিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
কারা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ আছেন। তারপরও তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেহেরুন নেছা নামে একজন মহিলা নার্সকে সার্বক্ষণিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিকালে তিনি হালকা নাস্তা করলেও রাতে কারাগারের দেওয়া খাবার খেয়েছেন। সবজি, মাছ, মাংস ও ডালসহ সব ধরনের খাবারই তাকে দেওয়া হয়েছিল। তার পছন্দের খাবার পেপের জুসও দেওয়া হয়। এছাড়া, খালেদা জিয়া যে কক্ষে রয়েছেন সেখানে ডিস সংযোগ ও এসি লাগানো হয়েছে।
কারা সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরপরই ঘুমিয়েছেন।শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুম থেকে উঠে কয়েকটি পত্রিকা পড়েছেন। এরপর তাকে রুটি, সবজি, ডিম ও চা দেওয়া হয়। তিনি সেগুলো খেয়েছেন। দুপুরেও কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার খেয়েছেন খালেদা জিয়া। শুয়ে, বসে, পত্রিকা পড়ে ও কারারক্ষীদের সঙ্গে আলাপ করেই সময় কাটিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে খালেদা জিয়ার জন্য তার পছন্দের কিছু ফল নিয়ে জেল গেটে গিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার স্ত্রী। কিন্তু খালেদা জিয়ার পছন্দের সেই ফল পৌঁছেনি তার কাছে। জেল গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাদের। দুপুরে আবারও ফল নিয়ে জেলগেটে যান বিএনপির তিন নেত্রী। তারা হলেন এডভোকেট আরিফা জেসমিন, নেত্রকোনা জেলা মহিলা দলের যুগ্মআহ্বায়ক রেহানা তালুকদার ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা। পুলিশ তাদেরও ফিরিয়ে দেয়।
কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির কয়েদি বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়া সব সুবিধা পাবেন। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টা কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া সব খাবারই তিনি খেয়েছেন। তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন।