স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে সিলেটের সড়কপথ ও রেলপথসহ সর্বত্র চলছে তল্লাশি। সতর্কতা হিসেবে ইতোমধ্যে সিলেটে নগরীতে আজ বৃহস্পতিবার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। সিলেট বিভাগ জুড়ে চলছে গ্রেফতার অভিযান। বাদ যাচ্ছে না সন্দেহভাজনরা। বাদ নেই জীবন-জীবিকার সন্ধানে কিংবা প্রয়োজনে সিলেটে আসা সাধারণ মানুষও!
খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সিলেটের প্রবেশের সবগুলো পথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। নিরাপত্তায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও। বাড়ানো হয়েছে টহল। পুলিশ বলছে, সরকার উৎখাত ও নাশকতার সতর্কতা হিসেবে সিলেট বিভাগের প্রবেশের পথগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। হয়রানি নয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য পুলিশের। তবে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, অপরাধীদের ধরতে গিয়ে সাধারণদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপি বলছে, অপরাধী ধরার নামে মামলার আসামি ধরার কথা বলে বিএনপিকে নেতাকর্মী শূন্য করার কৌশল নিয়েছে পুলিশ। চলছে গ্রেফতার-বাণিজ্য।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আব্দুল ওয়াহাব বলেন- সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সিলেটে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নগরীর ১৮টি স্থানে পুলিশ চেকপোস্ট করা হয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক কাউকে পেলে তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পরিবহণেও সন্দেহজনক কিছু পেলে চেক করছে পুলিশ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিলেটে প্রবেশমুখে তল্লাশি বসিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেখা যায়, বাস, পিকাপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না ব্যাগ কিংবা সোধারণ পথচারীরাও।
সিলেটে পুলিশের নাশকতাবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গত ৭২ ঘণ্টায় ৬১ জনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকারের প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় সিলেট জেলার বিভিন্ন থানায় গত ৪ থেকে ৭ ফেব্র“য়ারী পর্যন্ত সময়ে নাশকতা বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় মঙ্গলবার ২৬ জনসহ ৭২ ঘণ্টায় মোট ৬১ জন নাশকতাকারীকে আটকপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
নাশকতায় জড়িত থাকার কারণে এ সময়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ২টি, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর থানায় ১টি করে ৪টি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সিলেট জেলা পুলিশের সাঁড়াশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলে জানায় পুলিশ।
সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন : আট ফেব্র“য়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলাকারীদের প্রতিহত করতে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে স্থানীয় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ীতে চিরুণী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে টহল জোরদার করছে স্থানীয় আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী। উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের অব্যাহত চিরুণী অভিযানে আতঙ্কে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিএনপি-জামায়াত। ফলে ঘরবাড়ী ছাড়া বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের নাশকতা ঠেকাতে দেশের সকল জেলা উপজেলায় অনেক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের বিশেষ শাখার গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও বলছে থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। গেল ৪ ফেব্র“য়ারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিলেট আগমনকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোভা যাত্রা বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রদলের নেতকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ৮জনকে আটকও করে। পরে তিনজনকে ছেড়ে দেয়। গত রবিবার পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ছাত্রদলের ২৫জনকে আসামী করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার বাদী গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এএসআই কামাল হোসেন। আর ওই মামলার ৫জন আসামী জেল হাজতে রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি লক্ষণাবন্দ ইউপির বাসিন্দা রাহাত চাকলাদারকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার ভোরে নিজ বাড়ী থেকে আটক হন গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি মনিরুজ্জামান উজ্জল। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়কে ঘিরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে দাঁড়াতে দেবে না পুলিশ। অরাজকতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। বিশৃঙ্খলাকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে।
কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : আজ বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে কানাইঘাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আজকের রায়কে সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে করে কোথাও সংঘটিত হতে না পারে এজন্য থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ জানান খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে যাতে করে কেউ নাশকতা মূলক কর্মকান্ড ও জনমনে ভীতি সঞ্চার করতে না পারে এজন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। কাউকে আইন শৃঙ্খলার ব্যপ্তয় হয় এমন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করতে দেবে না পুলিশ। রায়কে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে পুলিশ জিরো টলারেন্স গ্রহণ করবে। এজন্য যা যা কিছু দরকার, পুলিশ করবে। কোন দলের বিরুদ্ধে পুলিশের এ্যাকশন নয় অপরাধের চেষ্টা যারা করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এদিকে খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে। হাট বাজারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। সবাই আত্মগোপনে আছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, পুলিশ প্রতিদিন তাদের বাসা বাড়ীতে হানা দিচ্ছে। মিছিল মিটিং এ বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন হুমকিতে দলের নেতাকর্মীরা আতংকে রয়েছেন।