স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসা সিক্ত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার আগমনে সিলেটে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। তাকে এক নজর দেখতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঘণ্টার ঘণ্টার পর রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নেতাকর্মীরা। সিলেটে কোন দলীয় কর্মসূচিতে বেগম খালেদা জিয়া অংশ না নিলেও নেতাকর্মীদের উৎসাহে কোন কমতি ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া সিলেট সার্কিট হাউসে পৌছার আগে থেকে এর আশপাশ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে। দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) মাজারেও ছিল একই অবস্থা।
প্রায় শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে ৭ ঘণ্টায় সিলেটে পৌঁছে সোমবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর সার্কিট হাউসে এসে প্রবেশ করে।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সার্কিট হাউসে প্রবেশের সময় তার গাড়িবহরকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শ্লোগান দিতে থাকে। তাকে এক নজর দেখতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কর্মী-সমর্থকদের। এর আগে সোমবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল হয়ে নগরীতে প্রবেশের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানাতে থাকেন। খালেদা জিয়াকে দেখেই মিছিল-শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে রাজপথ।
এর আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান এর দেওয়া তথ্য মতে সকাল সোয়া ৯টায় গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজা থেকে সড়কপথে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন বেগম জিয়া। এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ শতাধিক নেতা। খালেদা জিয়া সার্কিট হাউসে বিশ্রাম ও দুপুরের খাবার গ্রহণের পর বিকেলে তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।
শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সিলেটে শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে ২৯ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। এর পর তিনি সেখান থেকে গাড়িবহর নিয়ে হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজারে যান এবং তিনি রাত ৭ টা ৪০মিনিটে হযরত শাহপরান (রহ:)’র মাজার জিয়ারত করেন। পৃথক দুই ওলীর মাজারে ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন বেগম খালেদাসহ অন্যান্যরা। সেখান থেকে সার্কিট হাউসে পুনরায় পৌঁছান খালেদা জিয়া।
এর আগে খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে সোমবার দুপুর থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরানের মাজার প্রাঙ্গণে জড়ো হন কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মী। হাতে ব্যানারা পোস্টার নিয়ে দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানান তারা। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে এ সময় মাজার প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। দেখা দিয়েছিল দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা। তাকে এক নজর দেখতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দলের কর্মী ও সমর্থকদের। সার্কিট হাউস থেকে মাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেও বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন। নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে খালেদা জিয়াকে মাজারের এবাদতখানায় নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। ভিড়ের কারণে নেত্রীর দেখা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মহিলা দলের স্থানীয় অনেক নেত্রী।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেট সার্কিট হাউস থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।
সোমবার রাত পৌনে দশটার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর সিলেট সার্কিট হাউস ত্যাগ করে।
এর আগে সার্কিট হাউসে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। এ সময় সার্কিট হাউসের বাইরে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধানের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করেন।
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া সিলেট মাজার জিয়ারত শেষে সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করবেন এমনটিই সফরসূচী ছিলো। খালেদা জিয়াসহ তার সফর সঙ্গদের জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে মাজার জিয়ারত এবং সিলেট বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়ার পর গাড়ি বহর নিয়ে সিলেট ত্যাগ করলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং: খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সিলেট সার্কিট হাউসসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা। পোস্টারে লেখা ছিল- ‘এতিমের টাকা আত্মসাতকারী খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’। একই সাথে নগরীতে খালেদার সফর বিরোধী লিফলেটও বিতরণ করেছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন পোস্টারিং সাটাতে থাকে সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বেলা ২টার দিকে তারা সার্কিট হাউসের পশ্চিম দিকের দেয়ালে বেশ কয়েকটি পোস্টার লাগিয়ে দেয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী তাদেরকে পোস্টার লাগাতে বারণ করলে তারা চলে যায়। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি গৌছুল হোসেন বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং সাটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।