কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একই সঙ্গে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে কি না তা তদন্তে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠার পর রবিবার বিকালে সচিবালয়ে সভাকক্ষে এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পূর্বের সিদ্ধান্তসমূহ কার্যকর থাকবে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত বা ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেই বন্ধ হয়েছে কোচিং সেন্টার, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে থেকে পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে হয়েছে হলে, হলে কেন্দ্র প্রধান ছাড়া অন্যদের মোবাইল ফোন নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। আবার কেন্দ্র প্রধান এমন ফোনই নিতে পারছেন, যেটি নিয়ে ছবি তোলা যায় না।
আবার পরীক্ষা চলাকালে সাময়িক সময়ের জন্য ফেসবুক, হোয়টন অ্যাপ, ভাইবারের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে সেই প্রস্তাব রাখেনি আইসিটি মন্ত্রণালয়।
তবে এত কিছুর পরও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নি। বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পর্বের পরীক্ষা শুরুর ২৪ মিনিট আগে প্রশ্ন এসেছে ফেসবুকে। শনিবার এই প্রশ্ন এসেছ আরও আগে, প্রায় ৪৫ মিনিট আগে।
প্রশ্ন ফাঁস করলে তার কী হবে, সেটা নিজেই জানি না- মন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারির মধ্যেই ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে রীতিমত ‘বিজ্ঞাপন’ দেয়া হচ্ছে, প্রশ্নের জন্য যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে। আর গণমাধ্যমকর্মীরা এসব গ্রুপের খোঁজ পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদেরকে ধরতে পারেনি এখনও।
দুই দিন পরীক্ষার আগে আগে যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেটি পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছার সুযোগ ছিল কি না সে বিষয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। কারণ, এই সময়ে তারা পরীক্ষার হলে বা হলের পথেই ছিল। তবু প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পারায় তীব্র সমালোচনা হচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীর।
পরীক্ষা শুরুর আগে মন্ত্রী ঘোষণা দেয়া দিয়েছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস হলে বাতিল হবে পরীক্ষা। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো ঘোষণা আসেনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এই পরিস্থিতিতেই শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিলেন।
মন্ত্রী জানান, ফেসবুক এবং স্যোশাল মিডিয়ায় যে সকল পোস্ট এবং সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিটি পরীক্ষার ক্ষেত্রে পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি পরীক্ষা মনিটরিংয়ে কাজ করবে। এছাড়া চলমান পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি না এবং বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল হবে কি না সে বিষয়ে তদন্ত করে সুপারিশ করবে এ কমিটি।
১১ সদস্যের কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড থেকে একজন করে, পুলিশ থেকে দুই জন, কারিগরি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক জন প্রতিনিধি থাকবেন।
মন্ত্রী বলেন, বিকাশ এবং এ জাতীয় সকল আর্থিক সংস্থা এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দুই দিন আগে থেকে ৫ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে এমন লেনদেনের ত্যথাদি সংগ্রহ ও তদন্ত করে যদি দেখা যায় কোন পরীক্ষাথী লেনদেন করেছেন তার বিষয়ে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এখন পর্যন্ত যেসব প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তার প্রতিটিই হয়েছে পরীক্ষার আগে আগে। সরকারের সন্দেহ হলে প্রশ্নপত্র পাঠানোর সময় এটা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভিজিল্যান্স টিম আরও জোরদার করার কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর আধা ঘন্টা আগে প্রশ্নের মোড়ক খোলার সময় স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা, একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং কেন্দ্র সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে খোলা হবে।’
‘পরীক্ষা কেন্দ্রে কোন মোবাইল বা অন্য কোন ডিভাইস নিয়ে কোন শিক্ষার্থী, কর্মকতা বা কর্মচারী প্রবেশ করলে তাঁকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা প্রশ্ন ফাঁস বা ফাঁসের গুজব ছড়াচ্ছে, কার্যক্রম দেখে একথা প্রতীয়মান হয়, তাদের লক্ষ্য সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হেয় প্রতিপন্ন করা। এজন্যই পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করা হচ্ছে। এর সাথে জড়িত প্রত্যেকে ধরা পড়বে। তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।’
সভায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কেবিনেট ডিভিশন, বিটিআরসি এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।