স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমায় ইজতেমা ফেরত একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে ৪ মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার রশিদপুর সাতমাইলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দক্ষিণ সুরমা থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রিপন দাস নিহত ৪ জনের নাম নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার নোয়াগাওয়ের আবু বকর (৫৫), পাশ্ববর্তী গুলের গাওয়ের আকবর আলী (৫০), পলাইয়া গ্রামের আবদুল জফুর (৪৫) ও ৫নং কাঠাইর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং উলুতুল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক (৪৮)। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম জানা যায়নি। তাদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা থেকে একটি বাসে সুনামগঞ্জে ফেরত যাচ্ছিলেন ৩০ মুসল্লি। সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতমাইলে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই ৩ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করেন।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা থেকে একটি বাসে সুনামগঞ্জে ফেরত আসছিল অন্তত ৩০ মুসল্লি। সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাতমাইলে কুয়াশার মধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই ৩ জনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে খালেকের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ-আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর নিহতদের উদ্ধার ও দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে নিহত সুনামগঞ্জের চার মুসুল্লির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেলে কাঠইর ইউনিয়নে গোলগাঁও গ্রামে জানাযা শেষে তাদের নিজ নিজ গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
মুসুল্লিদের নিহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রবিবার দুপুর ১টায় দিকে একের পর এক লাশবাহী গাড়ি সদর উপজেলার কাঠইর এলাকায় পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। শেষ বারের মতো দেখতে নিহতদের বাড়িতে শত শত মানুষ ভীড় করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়।
নিহত আবু বক্করের বড় ভাই নোয়াগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘তার ভাই কাঠইর ইউনিয়ন তাবলীগ জামায়াতের আমির ছিলেন। তার নেতৃত্বে এলাকার মুসুল্লিরা টঙ্গীর দ্বিতীয় দফা বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে রবিবার বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। সিলেট সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ চারজন মারা যান। আবু বক্কর তিন সন্তানের জনক ছিলেন।’
নুরপুর গ্রামের আলম বাদশা বলেন, ‘বাসটি ৩০ জন যাত্রী নিয়ে সুনামগঞ্জে আসছিল। ভোরে কুয়াশা বেশি থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে তারা মারা যান।’
চান্দেরনগর গ্রামের মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কাঠইর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের একজন ইউপি সদস্য মারা যান।’
বিশিষ্ট মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাসের যাত্রীরা সবাই ইজতেমার আখেরি মোনাতাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। নিহতরা সবাই ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি ছিলেন।’
শাখাইতি গ্রামের নয়ন তালুকদার বলেন,‘ আসর এর আজানের পর গোলগাও গ্রামে চারজনের জানাযার শেষে তাদের নিজ নিজ গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।