সোনিয়া হত্যাকান্ডে ফের সজিব ২ দিনের রিমান্ডে

18

স্টাফ রিপোর্টার

নগরীর শেখঘাট খুলিয়াটুলায় কলেজছাত্রী সোনিয়া আক্তার (২১) হত্যাকান্ডের পর এক সপ্তাহ চলে গেলেও প্রকৃত রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। জানা যায়নি কী কারণে সোনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও সোনিয়ার মামাতো ভাই মূল অভিযুক্ত মো. সজিবকে (২৯) প্রথম দফায় ৩ দিনের রিমান্ডে নিলেও পুলিশের কাছে তিনি মুখ খুলেননি। ফলে তাকে আরও ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
গত ১২ ফেব্রæয়ারি দুপুরে নগরীর শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার শীতলজুড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ওই বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সোনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় এবং মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও করতেন।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাÐের আগে সোনিয়াদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন তার মামাতো ভাই সজিব। সজিব হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের ছেলে। ১২ ফেব্রæয়ারি সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়ার অসুস্থতার কারণে তাকে নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে চলে যান। পরে দুপুর ১২টার বাসায় ফিরে সোনিয়ার শয়নকক্ষে গিয়ে তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথম থেকেই সোনিয়ার পরিবারের দাবি ছিলো- এই হত্যাকাÐের সঙ্গে সজিব জড়িত। পুলিশের সন্দেহের তিরও ছিলো সজিবের দিকে। ঘটনার পর থেকে সজিব গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। সোনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারও খোয়া গেছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাÐের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে র‌্যাব প্রযুক্তির সহায়তায় সজিবের অবস্থান সনাক্ত করে এবং ১৩ ফেব্রæয়ারি রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানাধীন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
র‌্যাব জানায়- প্রায়ই সোনিয়াদের বাসায় আসতেন সজিব। খুনের ঘটনার আগে তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে ৭ দিন যাবৎ সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার আগের দিন ১১ ফেব্রæয়ারি সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ঐদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে নগরীর শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন। ঘটনার দিন সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। পরে হাসপাতাল হতে সোনিয়ার মা দুপুর ১২ টার দিকে বাসায় ফিরে সোনিয়ার শয়নকক্ষে ঢুকে বিছানায় তার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সোনিয়ার লাশের গলার বাম পাশে গভীর এবং ডান হাতের কব্জির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এসময় তল্লাশি করে সোনিয়ার খাটের তোষকের নিচ থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করে।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত সজিবকে বুধবার ১৫ ফেব্রæয়ারি আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রিমান্ডের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রæয়ারি সজিবকে নিয়ে সোনিয়াদের বাড়িতে যায় পুলিশ এবং তার দেখিয়ে দেওয়া স্থান থেকে বালতিতে রাখা রক্তমাখা জামা উদ্ধার করে। জামায় দুজনেরই রক্ত আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য পুলিশ জামা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রথম দফা রিমান্ডে নেওয়ার পর পুলিশের কাছে সজিব স্বীকারোক্তি দিলেও গত শনিবার ১৮ ফেব্রæয়ারি তাকে আদালতে তুললে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী না দেওয়ায় পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও দুই দিনের রিমান্ড দেন আদালত। গতকাল রবিবার দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের প্রথম দিন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার সজিবকে ফের আদালতে তোলা হবে।