তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণে গ্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ॥ চুনারুঘাটে পুুলিশের গুলিতে আহত সাবেক কাউন্সিলের ৪ মাসের মাথায় মৃত্যু ॥ পরিবারের আহাজারি

36

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী (৩৫)কে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে খুন করেছে পুলিশ, এমনটাই দাবী করছেন তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। ঘটনার পর থেকে থামছেনা ইউনুছ আলীর পরিবারের লোকজন ও ৪ অবুঝ সন্তানের আহাজারি।
সরেজমিনে ইউনুছ আলীর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী শাহেনা আক্তার-এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে মোবাইলে কল দিয়ে একটি বিচারে নেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। এরপর রাতে হঠাৎ আমার পরিচিত একজন ফোন দিয়ে জানায় পুলিশ আমার স্বামীকে গুলি করেছে।
আমি তাৎক্ষণিক আমার ভাশুরকে নিয়ে ঘটনাস্থল আয়না শাহ (রা.) মাজারের নিকট কাউছারের বাড়িতে যাই। তখন আমি আমার স্বামীকে দেখতে চাইলে পুলিশ আমায় ধমক দিয়ে বলে, অনেক সাহস বেড়ে গেছে, এখান থেকে ভাগ, না হলে ভালো হবে না। তাদের এমন ব্যবহার দেখে আমার ভাশুর আমাকে নিয়ে চলে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীরা বলেন, আমাদের এলাকার অত্যন্ত ভাল এবং সমাজসেবক লোক ছিলেন ইউনুছ আলী। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে এলাকাবাসীর পছন্দের প্রার্থী ইউনুছ আলী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দলমত নির্বিশেষ সকলে তার জন্য কাজ করে বিপুল ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
পরিবারের লোকজন জানান, ইউনুছ আলী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি চুনারুঘাট পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে বিভিন্ন সময় পুলিশ বাদী মামলায় বেশির ভাগ আসামী হিসেবে তার নাম থাকতো। চুনারুঘাট থানা পুলিশ প্রায় সময়ই ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে ইউনুছ আলীর পরিবারের লোকজনের উপর। কয়েক মাস পূর্বে চুনারুঘাট থানা পুলিশ এ.এস.আই দেলোয়ার-এর নেতৃত্বে ইউনুছ আলীর বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে তাকে না পেয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর ও ইউনুছ আলীর স্ত্রী শাহেনা আক্তারকে মারধর করে গুরুতর আহত করে।
এ সময় স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় শাহেনাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে গত ০৬-০৮-২০১৭ চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন, এসআই সাজিদ মিয়া, এসআই আতিকুল আলম খন্দকার, এসআই রিপন বড়–ুয়া, এসআই জোসেফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলাই কাল হয়ে দাঁড়ায় শাহেনা আক্তার ও তার পরিবারের। শাহেনার দায়েরকৃত মামলার কারণে চুনারুঘাট থানা পুলিশ চরম ক্ষিপ্ত হয় বলেও জানান।
পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের জানায়, ইউনুছ আলী ছিল মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে চুনারুঘাট থানায়। গত ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ খবর পায় ইউনুছ আলী ও তার সহকর্মীরা আয়না শাহ (রাঃ) নিকটবর্তী কাউসার নামে এক যুবকের ঘরে মাদক সেবন করছে। সেখানে গিয়ে তাদের গ্রেফতার করতে চাইলে ইউনুছ আলী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক তিনি একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই দারোগাকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় এসআই আতাউর রহমান নিজের পিস্তল থেকে গুলি ছুড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী পুলিশের এমন মন্তব্য ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও দাবি করছেন। ঘটনাস্থল আয়না শাহ (রাঃ) মাজারের পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, ঘটনার রাত প্রায় ১০ টার দিকে আমি ঘরেই ছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। পুলিশের ভয়ে আমরা কেউ ঘর থেকে বের হইনি।
স্থানীয়রা জানান, এমন নির্মমভাবে প্রশাসনের লোক মানুষ মারতে পারে আগে জানতাম না। ইউনুছ আলী যখন পানির জন্য যখন ছটফট করছিল তখন এক পুলিশ তার মুখের মধ্যে পা দিয়ে ছাপ দিয়ে ধরে। পরে তার একটি হাত মোছড়িয়ে ভেঙ্গে ফেলে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে উপরের দিকে বুকের বামপাশে আরেকটি গুলি করার সাথে সাথে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা এ প্রতিনিধিকে জানান, ইউনুছ খুব ভালো মানুষ ছিল সমগ্র পৌর এলাকার কারো সাথে তার বিবাদ নাই, কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়ায় জড়ায়নি সে, পুলিশ তাকে যেভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তা নিন্দনীয়, এই জঘন্য হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপার চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আজমিরুজ্জান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন ইউনুছ আলী জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি যদি মাদকসেবী বা ব্যবসায়ীই হতেন তাহলেও তাকে এমন নির্মমভাবে খুন করা হল কেন? দেশেতো আইন আছে, পুলিশ কেন নিজের হাতে আইন হাতে তুলে নিলো। এখন তার রেখে যাওয়া এই চার অবুঝ শিশুর (তিন মেয়ে ও এক ছেলে সুমি আক্তার (১০), সাফিয়া (৮), তানিয়া (৬) একটি অবুঝ ছেলে ৪ বছর বয়সী ফাহমিদ) দায়িত্ব কে নেবে? বাবা হারানো এই চার শিশুর কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। এছাড়াও স্থানীয় এলাকাবাসি দেশের গণমাধ্যমের সত্যতা না যাচাই করে এই ধরণের খবর প্রকাশ করায় নিন্দা জানান।
ইউনুস আলীর স্ত্রী শাহেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিএনপি করতেই তাই তাকে নির্মম ভাবে পুলিশ খুন করেছে, পুলিশের ভয়ে এখন পর্যন্ত আমি আমার স্বামীর এই নির্মম খুনের আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও পারছি না। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার স্বামীর খুনীদের ফাঁসি দাবি করছি।