নতুন বছরের প্রথম দিন বই উৎসব হবে সারা দেশে। শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই।
সেদিন থেকেই শুরু হবে নতুন শিক্ষাপঞ্জি। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। গত শনিবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষকদের ৯ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। প্রথম দিনের তুলনায় অনশনস্থলে শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা চান, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের বেতনের বৈষম্য কমানো হোক।
দেশের ৬৪ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে কোনো বেতনবৈষম্য ছিল না।
ওই বছরই প্রথম বেতন স্কেলে এক ধাপ পার্থক্য তৈরি হয়। ২০০৬ সালে দুই ধাপ পার্থক্য তৈরি হয়। ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার পর পার্থক্য বেড়ে দাঁড়ায় তিন ধাপ। প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে বেতন পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৪তম গ্রেডে। ২০১৪ সালে যখন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডে তিন ধাপ দূরত্ব তৈরি হয়, তখনই সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন তাঁরা। তাতে কোনো ফল হয়নি। এখন নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি ব্লক পোস্ট। এখানে কোনো পদোন্নতি নেই। একজন সহকারী শিক্ষককে সহকারী শিক্ষক হিসেবেই চাকরিজীবন শেষ করতে হয়। এখানে পদোন্নতির সুযোগ থাকলে আজকের মতো আন্দোলন হয়তো হতো না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ধাপে ধাপে যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারতেন। আগে তো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন অনেক কম ছিল। শেখ হাসিনার সরকার সেখান থেকে তাঁদের মুক্তি দিলেও বৈষম্য দূর করা যায়নি। প্রধান শিক্ষকদের বেতন যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানজনক হওয়া যেমন আবশ্যক, তেমনি সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে। যোগ্যদের শিক্ষকতা পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে হলে বেতনকাঠামো নিয়ে ভাবতে হবে। বেতন সম্মানজনক পর্যায়ের না হলে যোগ্যতাসম্পন্নরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ হবে না।
যোগ্য শিক্ষকের হাতেই তৈরি হবে ভবিষ্যতের নাগরিক। এই শিক্ষকদের কেন বেতনবৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলনে নামতে হবে? কেন আমরণ অনশনে যেতে হবে। শিক্ষকরা হয়তো অনশন প্রত্যাহার করবেন; কিন্তু তাঁদের যৌক্তিক দাবি অর্থাৎ বেতনবৈষম্য দূর করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করতে উদ্যোগী হবে।