বালাগঞ্জে ইমাম নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি, হামলায় আহত ২, এলাকায় উত্তেজনা

41

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় বাজার জামে মসজিদের ইমামকে নিয়ে এলাকার বিবদমান দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইমামের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বোয়ালজুড় বাজারে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় এক পক্ষের দু’জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহতরা হলেন, উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সফরু মিয়া খালিছাদারের ছেলে নুরুল আমীন খালিছাদার ও একই গ্রামের মৃত এলন মিয়ার ছেলে হাবিবুন নূর মনি। আহতদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আহত নূরুল আমীনের পিতা সফুর খালিছাদার জানান, হামলাকারীরা তার ছেলের শরীরে ধারালো চাকু দিয়ে তিনটি কুপ দেয় এতে তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অপর আহত যুবক হাবিবনু নূর মনি মুঠোফোনে জানান, হামলাকারীরা তার ডান হাতে ধারালো চাকু দিয়ে রক্তান্ত জখম করে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বালাগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাৎক্ষণিক একজনকে আটক করলেও রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালজুড় বাজার জামে মসজিদে মাওলানা সফিকুল ইসলাম জিহাদি প্রায় দুই বছর ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর বাড়ি ছাতক উপজেলার গৌরনগর গ্রামে।
স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন ওই ইমামের বিরুদ্ধে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে তাফসীর না করার অভিযোগ তুলেন। তাফসীর পুন:রায় চালুর দাবিতে মসজিদ কমিটির নিকট একটি লিখিত আবেদন দেন। আবেদনে-শাহ্ আব্দুল করিম, শাহ্ ছানাওর আলী, সফুর মিয়া খালিছাদার, আব্দুল কুদ্দুছ লকুছ, শাহ্ মাসুক আলী, শাহ্ শাহীন আলী, আব্দুল গফ্ফার, মুফতি মাহমুদ জায়গীরদার, আকতারুল ইসলাম, রাজু আহমদ খালিছাদার ও খালেদ আহমদ খালিছাদারসহ ১৫৬ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। আবেদন দেয়ার পর ‘রাসূলের সৈনিক’ (ইংলিশ অক্ষরে লিখা) নামে একটি ফেইসবুক আইডি থেকে ইমামের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। স্ট্যাটাস দেয়ার পর ইমামকে নিয়ে এলাকায় নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে বালাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। বৃহস্পতিবার ইমাম সফিকুল ইমলাম অভিযোগ তুলেন কতিপয়রা তার বিরুদ্ধে নাকি কটুক্তি করে বেড়াচ্ছে। কথিত এই কটুক্তিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে ইমামের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারীদের হাতাহাতি ও হামলার ঘটনাটি ঘটে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে মসজিদ কমিটির সদস্য ফকরুল ইসলাম বলেন, ইমামকে নিয়ে ফেইসবুকে অপ-প্রচার করায় কথিপয় দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাজারে সৃষ্ট ঘটনাটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাজার কমিটি ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বোয়ালজুড় বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিকুল ইসলাম জেহাদী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বোয়ালজুড় বাজার জামে মসজিদে ইমামতি করে আসছি। তাফসীর নিয়ে মসজিদ কমিটির নিকট আবেদন, ফেইসবুকে লেখালেখি, থানায় জিডির বিষয়টি মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দরা আমাকে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনার সময় আমি মসজিদে ছিলাম না শুক্রবার সকালে মসজিদে এসে বিষয়টি শুনেছি।
বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম জালাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।